Home লাইফস্টাইল ত্বকের যত্নে যষ্ঠিমধুর জাদু

ত্বকের যত্নে যষ্ঠিমধুর জাদু

ফাহমিদা শিকদার
২৩ views

প্রাকৃতিক উপাদানের প্রতি আমাদের আস্থা আজকাল আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আর আয়ুর্বেদিক গুণসম্পন্ন এমনই এক উপাদান হল যষ্ঠিমধু বা মুলেঠি। মুখের কালচে দাগ, ব্রণ, রোদে পোড়া দাগ এবং ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে প্রাচীনকাল থেকেই যষ্ঠিমধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
যষ্ঠিমধু বা লিকোরিস (Licorice) হাজার হাজার বছর ধরে ভারতীয় আয়ুর্বেদ, চীনা হার্বাল চিকিৎসা এবং গ্রিক হেলেনিক চিকিৎসাবিদ্যায় ব্যবহার হয়ে আসছে। আয়ুর্বেদে যষ্ঠিমধুকে “যষ্ঠিমধু রসায়ন” বলা হয়—অর্থাৎ এমন একটি উপাদান যা শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে এবং প্রাণশক্তি বৃদ্ধি করে। ত্বকের যত্নে এর ব্যবহার অনেক পুরনো। রাজকীয় নারীরা যষ্ঠিমধুর গুঁড়া ব্যবহার করতেন মুখ উজ্জ্বল ও দাগহীন রাখতে। যষ্ঠিমধুর আয়ুর্বেদিক ব্যবহার প্রায় ৪০০০ বছরের পুরনো। প্রাচীন ভারতে এটি শুধু ত্বকচর্চা নয়, বরং গলা ব্যথা, হজমের সমস্যা এবং বিভিন্ন প্রদাহজনিত অসুখেও ব্যবহৃত হতো। আয়ুর্বেদ গ্রন্থ ‘চরক সংহিতা’-তেও যষ্ঠিমধুর প্রশংসা করা হয়েছে তার ঠান্ডা ও জীবাণুনাশক গুণের জন্য।

ত্বকের উপকারে যষ্ঠিমধু
বর্তমান প্রাকৃতিক স্কিনকেয়ার ট্রেন্ডে যষ্ঠিমধু আবার ফিরে এসেছে তার অমূল্য উপকারিতার জন্য। নিয়মিত ব্যবহারে এটি:

  • যষ্ঠিমধু ত্বকের অতিরিক্ত মেলানিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। পাশাপাশি ত্বকের টেক্সচারও মসৃণ করে।
  • ব্রণের দাগ, সান ট্যান ও হরমোনাল পিগমেন্টেশন ধীরে ধীরে কমায়।
  • সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে; যষ্ঠিমধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তা থেকে সুরক্ষা দেয়।
  • যষ্ঠিমধু ত্বকের লালচে ভাব, চুলকানি বা অ্যালার্জি প্রশমনে সহায়ক।
licorice powder with dry roots o

যষ্ঠিমধু একটি শক্তিশালী মেলানিন উৎপাদন রোধকারী যৌগ, ছবি: রেভিভা ল্যাবস

উপাদান বিশ্লেষণ: ত্বকে কাজ করে যেভাবে

  • গ্লাব্রিডিন (Glabridin): যষ্ঠিমধুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি একটি শক্তিশালী মেলানিন উৎপাদন রোধকারী যৌগ। গ্লাব্রিডিন টায়রোসিনেজ নামক একটি এনজাইমকে ব্লক করে, যেটি মেলানিন উৎপাদনের জন্য দায়ী। এর ফলে ত্বক উজ্জ্বল হয় ও দাগ কমে।
  • লিকুইরিটিন (Liquiritin): এটি ত্বকের কালচে ভাব ও পিগমেন্টেশন হালকা করে, এবং বিদ্যমান মেলানিনকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে।
  • গ্লিসাইরেজিন (Glycyrrhizin) ও ফ্ল্যাভোনয়েডস: যষ্ঠিমধুতে রয়েছে বিভিন্ন ফ্ল্যাভোনয়েড যা সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে লড়াই করে, ত্বককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং বয়সজনিত ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
LICORICE IMAGE BANNER 51306aec c

অনেক ব্র্যান্ড যষ্ঠিমধুর নির্যাসে তৈরি ক্রিম ও সিরাম বাজারে এনেছে, ছবি: বেবি ফরেস্ট

ব্যবহারের উপায়
যষ্ঠিমধু ত্বকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়:

  • ফেসপ্যাক হিসেবে: যষ্ঠিমধু গুঁড়া, মুলতানি মাটি ও গোলাপজল মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে লাগানো যায়। দুধ বা মধুর সাথে মিশিয়ে সরাসরি লাগালেও উপকার মেলে।
  • সিরাম বা ক্রিমে: অনেক ব্র্যান্ড যষ্ঠিমধুর নির্যাসে তৈরি ক্রিম ও সিরাম বাজারে এনেছে।

সতর্কতা
সব প্রাকৃতিক জিনিসই সবার জন্য উপকারী নাও হতে পারে। যষ্ঠিমধু ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া ভালো, বিশেষত সংবেদনশীল ত্বকের জন্য। গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যষ্ঠিমধু ব্যবহার করা যাবে না।

যষ্ঠিমধু শুধুমাত্র একটি আয়ুর্বেদিক উপাদান নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক স্কিন রিভাইভার। এর বিজ্ঞানভিত্তিক উপাদানগুলো ত্বককে ভেতর থেকে রক্ষা ও পুনরুজ্জীবিত করে। যদি আপনি কেমিকেলমুক্ত ত্বকের যত্নে বিশ্বাস করেন, তবে যষ্ঠিমধু আপনার সৌন্দর্যচর্চার তালিকায় অবশ্যই যুক্ত হতে পারে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ