প্রতিবছর ৬ মে তারিখে পালিত হয় ইন্টারন্যাশনাল নো ডায়েট ডে (INDD) — একটি বিশেষ দিন, যেখানে মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে প্রতিদিন শরীরকে একটি নির্দিষ্ট “আদর্শ” ফর্মে বা আকারে আনতে গিয়ে কঠিন ডায়েটের মধ্যে পড়ে যাওয়াটা জরুরি নয়। বরং, নিজের শরীরকে ভালোবাসা, স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া এবং বডি-ইমেজ সম্পর্কিত ভুল বার্তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই এই দিনের মূল বার্তা।
এই দিনটি উদযাপন করা হয় খাবারকে অপরাধবোধ ছাড়াই উপভোগ করার অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে, এবং শরীরের গঠন, মাপ বা ওজন নির্বিশেষে সব শরীরকে সম্মান করার আহ্বান জানাতে।
ইতিহাসের পেছনে: এক নারীর বিদ্রোহ
১৯৯২ সালে ব্রিটিশ নারীবাদী লেখিকা ও বডি-ইমেজ অ্যাক্টিভিস্ট মেরি ইভান্স ইয়াং প্রথম এই দিনটির সূচনা করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা-সহ বিভিন্ন ধরনের খাওয়ার সমস্যা (eating disorder) ভোগ করার পর সিদ্ধান্ত নেন, সমাজের চাপ আর “পারফেক্ট বডি” ধারণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

সুস্থ শরীর মানে সবসময় চিকন শরীর নয়, ছবি: ফ্রিপিক
প্রথমবার মাত্র কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে তিনি একটি ছোট্ট সভার আয়োজন করেন লন্ডনে, যার মূল বার্তা ছিল: “ডায়েট করা মানেই নিজের শরীরের সঙ্গে যুদ্ধ করা – এবার সময় এসেছে শান্তির।”এরপর ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের নানা জায়গায় এই বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। এখন এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃত।
দিবসটির আসল লক্ষ্য কী?
ইন্টারন্যাশনাল নো ডায়েট ডে’র উদ্দেশ্য বহুমাত্রিক:
- বডি-ইমেজ সম্পর্কিত সামাজিক চাপ এবং অসম্ভব সুন্দর্যের মানদণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা।
- খাওয়ার সমস্যা (eating disorder) বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি।
- ফ্যাটফোবিয়া, ওজন-ভিত্তিক বৈষম্য, বডি-শেমিং বিরুদ্ধে কথা বলা এবং ডায়েট সংস্কৃতির সমালোচনা।
- “হেলদি বডি” বা সুস্থ শরীর মানে সবসময় চিকন শরীর নয় – এই সত্যকে তুলে ধরা।
- “সেলফ-অ্যাকসেপ্টেন্স” বা নিজের শরীরকে গ্রহণ ও সম্মান করা এবং ভালোবাসার চিন্তাকে এগিয়ে নেওয়া।
আছে সমালোচনাও
যদিও দিনটি অনেকের কাছে মুক্তির বার্তা, সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে:

কেউ কেউ ভাবেন, এই দিবস ‘অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন’-কে উৎসাহিত করতে পারে, ছবি: ফ্রিপিক
- কিছু চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদ মনে করেন, নো ডায়েট বার্তাটি স্বাস্থ্য সচেতনতাকে অপছন্দ করার বার্তা দিতে পারে।
- কেউ কেউ ভাবেন, এটি ‘অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন’-কে উৎসাহিত করতে পারে যদি যথাযথ ব্যাখ্যা না দেওয়া হয়।
- আবার কর্পোরেট ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে কেউ কেউ এই দিবসের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ‘বডি পজিটিভ’ মার্কেটিং করে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে একই রকম সৌন্দর্যের মানদণ্ড প্রচার করে।
সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন: হ্যাশট্যাগের বিপ্লব
বর্তমানে এই দিবসটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। আর এই উদযাপনে পৃষ্ঠপোষকতা করে ন্যাশনাল ইটিং ডিজঅর্ডারস অ্যাসোসিয়েশন। এই দিন #NoDietDay, #BodyPositivity, #SelfLove, #HealthAtEverySize-এর মতো হ্যাশট্যাগে লক্ষ লক্ষ মানুষ শেয়ার করেন:
- নিজের শরীরকে ভালোবাসার গল্প
- কঠিন ডায়েট ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত
- খোলা মনে ফুড ফটোগ্রাফি
- ডায়েট সংস্কৃতির মানসিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা

ডায়েট নয়, বরং ভারসাম্য, আনন্দ, ও আত্মসম্মানই হতে পারে আসল ‘ফিটনেস গোল’, ছবি: ফ্রিপিক
ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটকে অসংখ্য ‘What I eat on No Diet Day’, ‘Unfiltered Body’ বা ‘My Body My Rules’ ক্যাম্পেইনের দেখা মেলে।
নিজের শরীরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন
ইন্টারন্যাশনাল নো ডায়েট ডে কেবল এক দিনের উদযাপন নয় – এটি এক মনোভাবের পরিবর্তন। আজকের দিনে, একবার অন্তত প্রশ্ন তোলাই যায় — “আমি কি আমার শরীরকে ভালোবাসছি, নাকি সমাজের চোখে ভালো দেখাতে নিজেকে দমন করছি?” হয়তো ডায়েট নয়, বরং ভারসাম্য, আনন্দ, ও আত্মসম্মানই হতে পারে আসল ‘ফিটনেস গোল’।