বর্তমান সময়ের কর্মব্যস্ত জীবনে অফিস কেবল কাজের স্থান নয়—এটি হয়ে উঠেছে দ্বিতীয় একটি বাসস্থান। তাই কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা, পেশাদার সাফল্য এবং ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য আধুনিক অফিসগুলো নানা রকম সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। শুধু একটি ডেস্ক আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই চলবে না, প্রয়োজন এমন পরিবেশ যা কর্মীদের অনুপ্রাণিত করে, আরাম দেয় এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অফিসে চালু করা হয়েছে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা। চলুন একনজরে সে সম্পর্কে জেনে নিই-
ওয়েলনেস রুম ও মেডিটেশন স্পেস
মানসিক চাপ কমাতে অনেক আধুনিক অফিসেই রয়েছে ‘ওয়েলনেস রুম’। এসব ঘরে কর্মীরা কিছুক্ষণ নিঃশব্দে বিশ্রাম নিতে পারেন, চোখ বন্ধ করে ধ্যান করতে পারেন বা শুধুই নিজেকে সময় দিতে পারেন। এটি কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দারুণ কার্যকর।

অনেক অফিসেই রয়েছে ছোটখাটো জিম, যোগ ক্লাস কিংবা গ্রুপ ফিটনেস সেশন, ছবি: দ্যা ফিটনেস আউটলেট
ইন-হাউস জিম ও ফিটনেস ক্লাস
সুস্থ দেহে সুস্থ মন। তাই অনেক অফিসেই রয়েছে ছোটখাটো জিম, যোগ ক্লাস কিংবা গ্রুপ ফিটনেস সেশন। কর্মীরা কাজের ফাঁকে বা আগে-পরে শরীরচর্চা করে কর্মক্ষমতা ধরে রাখতে পারেন।
হেলদি ক্যান্টিন বা স্ন্যাক বার
অফিস ক্যান্টিনে শুধু চা-কফি বা তেল-চর্বি ভরা খাবার নয়—থাকা উচিত স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস, ফলমূল, গ্লুটেন-মুক্ত খাবার কিংবা ভিগান অপশনও। সুস্থ খাওয়ার অভ্যাস কর্মীদের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং তাদের মধ্যে সুস্থ জীবনের প্রতি সচেতনতা গড়ে তোলে।
ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক আওয়ার ও রিমোট ওয়ার্ক অপশন
কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য রক্ষায় ‘ফ্লেক্সিবল টাইম’ আজকাল খুবই জরুরি। অনেক অফিস এখন কর্মীদের সকাল ৯টা থেকে ৫টার বাঁধাধরা সময়ের বাইরে কাজের স্বাধীনতা দিচ্ছে। পাশাপাশি, রিমোট ওয়ার্ক বা হাইব্রিড মডেলও সাধারণ হয়ে উঠছে।

অনেক অফিসে কর্মীদের সন্তানদের ডে-কেয়ার সুবিধা রয়েছে, ছবি: পিন্টারেস্ট
ডে-কেয়ার সুবিধা
যেসব কর্মীদের ছোট সন্তান রয়েছে, তাদের জন্য অফিসে ডে-কেয়ার সুবিধা হলে তা একটি বিশাল সহায়তা। এতে কর্মীরা মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন, এবং সন্তানের সুরক্ষা নিয়েও নিশ্চিন্ত থাকেন।
ক্রিয়েটিভ ব্রেকস্পেস ও গেম জোন
দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখার পর একটু মানসিক বিশ্রামের দরকার হয়। তাই আধুনিক অফিসে গেম জোন, বই পড়ার কোণা বা পেন্টিং দেয়াল রাখা হয় যেখানে কর্মীরা ইচ্ছামতো কিছু সময় কাটিয়ে আবার নতুন উদ্যমে কাজে ফিরতে পারেন।
মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট ও কাউন্সেলিং সার্ভিস
মন ভালো না থাকলে কাজেও মন বসে না। তাই কিছু অফিস এখন মানসিক স্বাস্থ্য সেবা যেমন কাউন্সেলিং, অনলাইন থেরাপি বা ‘ইমপ্লয়ি অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রাম (EAP)’ চালু করেছে, যা কর্মীদের মানসিক চাপে পাশে দাঁড়ায়।
একটি আধুনিক অফিস কেবল কাজের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করে না, বরং কর্মীদের জীবনের গুণগত মান উন্নত করাকেও গুরুত্ব দেয়। ভালো কাজের পরিবেশ মানেই শুধু চেয়ারে বসে কাজ নয়—তা হতে পারে শরীর-মন দুটোই সচল রাখার জায়গা। কাজ ও জীবনের ভারসাম্যই হতে পারে আগামীর কর্মসংস্কৃতির মূল ভিত্তি।