কিমচি! দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় খাবার হলেও এর জনপ্রিয়তা বিশ্ব জুড়ে। কিমচি এখন বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে ট্রেন্ডি খাবার। এটি মূলত ফারমেন্টেড বা গাঁজানো সবজি। ক্ল্যাসিক কিমচি নাপা ক্যাবেজ বা চাইনিজ বাঁধাকপি দিয়ে বানানো হয়। তবে দক্ষিণ কোরিয়াতে অন্তত ২০০ রকম কিমচির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এটি শুধু সুস্বাদুই নয়, স্বাস্থ্যকরও বটে। পুষ্টিবিদেরা কিমচিকে সুপারফুড বলে অ্যাখায়িত করেছে। কারণ এর পুষ্টিগুণের কোন অভাব নেই।
কেন কিমচি সুপারফুড?
- কিমচি ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়, যা ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন করে। এটি হজমক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
- এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ, বি, সি এবং বেটা ক্যারোটিন, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষগুলোর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
- কিমচি ক্যালরি কম কিন্তু ফাইবার বেশি, যা দীর্ঘ সময় ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে এবং মেটাবোলিজম বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

বিভিন্ন পুষ্টিগুণের জন্য পুষ্টিবিদেরা একে সুপারফুড বলে, ছবি: ফ্রিপিক
- কিমচিতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান যেমন রসুন ও আদা, কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং হাইপারটেনশন (উচ্চ রক্তচাপ) নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা হার্টের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
- এর মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা বাত, জয়েন্টের ব্যথা ও প্রদাহজনিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
- গবেষণায় দেখা গেছে, কিমচি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
ঘরে কিমচি তৈরির সহজ উপায়
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত কয়েক বছর ধরে কিমচি তৈরির পদ্ধতি নিয়ে অনেক কনটেন্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ঐতিহ্যবাহী কিমচি যা নাপা ক্যাবেজ বা চাইনিজ বাঁধাকপি দিয়ে তৈরি, তার রেসিপি বেশি দেখা গেছে। পাশাপাশি এতে ব্যবহার করা হয় দক্ষিণ কোরিয়ার এক বিশেষ ধরনের মরিচের পেস্ট গোচুজাং অথবা মরিচের গুঁড়া গোচুগারু। তবে চাইলে এদের বিকল্প হিসেবে আমাদের হাতের কাছে থাকা লাল মরিচের পেস্ট বা গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে সামান্য কিছু উপাদান এদিক-সেদিক করে ঘরেই তৈরি করতে পারেন কিমচি।

কিমচি তৈরির উপকরণ, ছবি: সিরাচা কিমচি
উপকরণ
১টি বড় চীনা বা সাধারণ বাঁধাকপি (নাপা ক্যাবেজ)
১/৪ কাপ সমুদ্রের লবণ
৪ কাপ পানি
১ কাপ গাজর জুলিয়ান কাট (ঐচ্ছিক)
১ কাপ শসা জুলিয়ান কাট (ঐচ্ছিক)
৪-৫টি সবুজ পেঁয়াজ জুলিয়ান কাট
১ টেবিল চামচ আদা কুচি
১ টেবিল চামচ রসুন কুচি
১ টেবিল চামচ চিনি
২-৩ টেবিল চামচ কোরিয়ান রেড চিলি ফ্লেক্স (গোচুগারু) বা লাল মরিচের গুঁড়া
২ টেবিল চামচ মাছের সস (ঐচ্ছিক)
১ টেবিল চামচ সয়া সস
প্রস্তুত প্রণালী
- বাঁধাকপি লম্বা করে কাটুন এবং প্রতিটি পাতার মধ্যে লবণ ছিটিয়ে দিন। ৪ কাপ পানিতে এটি ২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। মাঝে মাঝে নেড়ে দিন যাতে সমানভাবে নরম হয়।
- বাঁধাকপি ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। অন্য সবজিগুলো কেটে নিন।
- একটি বড় বাটিতে আদা, রসুন, চিনি, মাছের সস, সয়া সস, ও চিলি ফ্লেক্স একসঙ্গে মিশিয়ে নিন।

কিমচি এভাবে কাঁচের বয়ামে সংরক্ষণ করে বছরের পর বছর খাওয়া যায়, ছবি: ওহ মাই ভেজিস
- বাঁধাকপি ও অন্যান্য সবজি মশলার সঙ্গে ভালোভাবে মেখে নিন।
- একটি পরিষ্কার কাচের বয়ামে বা যেকোন এয়ার-টাইট ফুড গ্রেড বক্সে কিমচি ভর্তি করুন। হালকাভাবে চাপ দিয়ে রাখুন, যাতে বাতাস বের হয়ে যায়। ঢাকনা ঢিলে করে লাগিয়ে ১-২ দিন রুম টেম্পারেচারে রেখে দিন। এরপর কিমচি ফ্রিজে রেখে সারাবছর ধরে খাওয়া যায়।