আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক না থাকলে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়। এটি আমাদের সকল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, চিন্তা ও অনুভব করার ক্ষমতা দেয়| সহায়তা করে স্মৃতি গঠনে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তবে এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে মস্তিষ্ক থাকে সুস্থ ও সচল থাকে। চলুন খাবারগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
তৈলাক্ত মাছ
মস্তিষ্কের খাবার নিয়ে কথা বললে, চর্বিযুক্ত মাছ সাধারণত তালিকার শীর্ষে থাকে, কারণ এটি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। মস্তিষ্কের প্রায় ৬০ শতাংশ চর্বি দিয়ে গঠিত, এবং এর অর্ধেকেরও বেশি অংশ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড দিয়ে তৈরি। মস্তিষ্ক ওমেগা-৩ ব্যবহার করে স্নায়ুকোষ তৈরি করে। এই ফ্যাটি এসিড কোন কিছু শেখা এবং সেই শেখার স্মৃতি ধারণ করে রাখতে সাহায্য করে। কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে, যারা নিয়মিত মাছ খান, তাদের মস্তিষ্কে সাধারণত বেশি পরিমাণে গ্রে মেটার থাকে। গ্রে মেটারের এমন স্নায়ুকোষ থাকে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া, স্মৃতি এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

মস্তিষ্কের খাবার নিয়ে কথা বললে, চর্বিযুক্ত মাছ সাধারণত তালিকার শীর্ষে থাকে, কারণ এটি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। ছবিঃ হেলথলাইন।
ডার্ক চকলেট
একটি ডার্ক চকলেটে ৭০% কোকো বা ক্যাকাও থাকে যা, ফ্ল্যাভোনয়েড নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খুব ভালো উৎস। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মস্তিষ্ক অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এটি বয়সজনিত স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং মস্তিষ্কের রোগে অবদান রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে পারে। ডার্ক চকলেট ব্রেনে রক্ত প্রবাহকে বাড়াতে সাহায্য করে। তাই মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে। ছবিঃ হেলথলাইন।
বাদাম
বাদাম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খুবই উপকারি। বাদাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেলে সমৃদ্ধ। ওয়ালনাট বা আখরোট, আমন্ড ও কাজু বাদাম স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে, মনোযোগ বৃদ্ধি করতে এবং সমস্যার সমাধানের দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। পেস্তা বাদাম ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কমাতে পারে।

বাদাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেলে সমৃদ্ধ। ছবিঃ ফুড রেভ্যুলেশন নেটওয়ার্ক।
ডিম
ডিম কোলিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। কোলিন মস্তিষ্কে অ্যাসিটাইলকোলিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের উৎপাদনে সাহায্য করে, যা স্মৃতি এবং শেখার ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ। ডিমে ভিটামিন বি১২, বি৬ ও ফোলেট থাকে, যা মস্তিষ্কের কোষের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং মানসিক অবসাদ এবং বিষণ্ণতা হ্রাস করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কোষের স্বাস্থ্য ভালো রাখায় মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও বাড়ায়। এছাড়া এটি হোমোসিস্টিন লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে, যা স্মৃতিশক্তি হ্রাসের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ দিক। পুষ্টিবিদেরা এজন্য সকালের নাস্তায় ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন। এতে দিনব্যাপী মানসিক কার্যক্ষমতা ভালো থাকে।

ডিমে থাকা কোলিন মস্তিষ্কে অ্যাসিটাইলকোলিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের উৎপাদনে সাহায্য করে, যা স্মৃতি এবং শেখার ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ। ছবিঃ ফুড নেটওয়ার্ক।
আপেল
২০০৬ সালে করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, আপেলে ‘কারসেটিন’ নামের এক ধরনের এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষের মৃত্যুর হার কমায়, নিউরনের প্রদাহজনিত সব রোগের ঝুঁকি কমায়। এমনকি আপেলের রসের সঙ্গে মস্তিষ্কে বেশি পরিমাণে নিউরো ট্রান্সমিটার তৈরির সম্পর্ক পাওয়া গেছে, যা স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করতে এবং ব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। একইভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও বাড়ায়।

আপেলের রসের সঙ্গে মস্তিষ্কে বেশি পরিমাণে নিউরো ট্রান্সমিটার তৈরির সম্পর্ক পাওয়া গেছে। ছবিঃ হেলথলাইন।
গ্রিন টি
গ্রিন টিতে ক্যাফেইন থাকে, তবে এর পরিমাণ অন্যান্য পানীয়ের তুলনায় কম। ক্যাফেইন মনোযোগ বাড়ায় এবং উদ্দীপনা জোগায়। এতে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে। এটি মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, যা মানসিক তীক্ষ্ণতা বাড়াতে সহায়ক। এছাড়া গ্রিন টিতে আছে এল-থিয়ানিন, যা মানসিক চাপ কমায় এবং শান্ত মনোভাব বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি ক্যাফেইনের সঙ্গে মিলিত হয়ে মনোযোগ এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।

গ্রিন টিতে আছে এল-থিয়ানিন, যা মানসিক চাপ কমায় এবং শান্ত মনোভাব বজায় রাখতে সহায়তা করে। ছবিঃ ন্যাচার।