Home বিজ্ঞান ইলেকট্রিক তার নয়, ব্যাকটেরিয়াই এখন বিদ্যুৎ বহন করবে

ইলেকট্রিক তার নয়, ব্যাকটেরিয়াই এখন বিদ্যুৎ বহন করবে

৩৯ views

যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেটের ইয়াকুইনা উপসাগরের তীরে পাওয়া এক ব্যাকটেরিয়ার আছে অদ্ভুত ক্ষমতা। বিজ্ঞানীরাও বলছে এটি  প্রকৃতির অভিনব বিস্ময়। বিচিত্র জৈবিক গঠনের কারণে ব্যাক্টেরিয়াটি  বিদ্যুৎ পরিবহনে সক্ষম। বর্তমানে এই ব্যাকটেরিয়া গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, কারণ এটি ভবিষ্যতের পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

ব্যাকটেরিয়ার এই ব্যতিক্রমী নতুন প্রজাতির নাম Candidatus Electrothrix yaqonensis, যা ওরেগনের একটি লবণাক্ত সমুদ্র সৈকতে আবিষ্কৃত হয়েছে। এটি ‘ক্যাবল ব্যাকটেরিয়া’ নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, যেগুলি রড-আকৃতির মাইক্রোবের সমন্বয়ে গঠিত এবং একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে দীর্ঘ ফিলামেন্ট তৈরি করে।

ব্যাকটেরিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো উচ্চ বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা। গবেষণায় দেখা গেছে, এর ফিলামেন্টের বাইরের আবরণে পুরু, সর্পিল-আকৃতির রিজ রয়েছে, যা পূর্বে পরিচিত প্রজাতিগুলির তুলনায় তিনগুণ পুরু। এই ফিলামেন্টটি একটি স্বচ্ছ, অ-পরিবাহী শীথ দ্বারা আবৃত, যা পরিবেশগত প্রতিকূলতা থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

এর অভ্যন্তরে একটি নিকেল-কেন্দ্রিক ধাতব কমপ্লেক্স রয়েছে, যা ‘জৈবিক তার’ হিসেবে ইলেকট্রন পরিবহনে সহায়তা করে। গবেষকরা যখন এই ফিলামেন্টকে স্বর্ণের ইলেকট্রোডে স্থাপন করে ভোল্টেজ প্রয়োগ করেন, তখন তারা একটি রৈখিক ও সমমিত I-V কার্ভ পর্যবেক্ষণ করেন, যা এর উচ্চ বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা নির্দেশ করে। এর বৈদ্যুতিক প্রতিরোধ প্রায় ৩৭০ কিলো-ওহম, যা পূর্বে পরিচিত কেবল ব্যাকটেরিয়ার সমতুল্য বা তার চেয়েও উন্নত।

জিনগত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই নতুন প্রজাতির মধ্যে Candidatus Electrothrix এবং Candidatus Electronema উভয় গণের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এটিকে একটি ‘জিনগত মোজাইক’ হিসেবে চিহ্নিত করে। এর সাইটোক্রোম প্রোটিনে দুটি হিম রয়েছে, যা ইলেকট্রন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, এটি লবণাক্ত পরিবেশে অভিযোজিত হতে ‘সোডিয়াম-প্রোটন এক্সচেঞ্জ ট্রান্সপোর্টার’ ব্যবহার করে। এই বৈশিষ্ট্য সাধারণত লবণজলে বাস করা ব্যাকটেরিয়ায় দেখা যায় না।

ব্যাকটেরিয়ার উচ্চ বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা এবং পরিবেশগত অভিযোজন ক্ষমতা এটিকে বায়োইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় করে তোলে। গবেষকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এটি বায়োডিগ্রেডেবল ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং বায়োসেন্সর তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে, পাশাপাশি পরিবেশগত দূষণ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হতে পারে।

সূত্র: ওইয়ার্ড ডট কম ও ফোর্বস

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ