Home সর্বশেষ দৃষ্টিসীমা পেরিয়ে নতুন রঙ ‘ওলো’

দৃষ্টিসীমা পেরিয়ে নতুন রঙ ‘ওলো’

তাসনিম তাবাসসুম
৫১ views

এমন এক রং যা আগে কেও কল্পনাও করেনি, তা আবিষ্কার করতে সফল হয়েছে বিজ্ঞানীরা। নতুন এই রঙটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওলো’ (olo)। ওলো আবিষ্কারের তাৎপর্য কেবল রঙের প্যালেটে একটি নতুন নাম যোগ করার চেয়েও অনেক বেশি। এটি দৃষ্টি, রঙ তত্ত্ব এবং এমনকি মস্তিষ্কের অভিযোজনযোগ্যতা সম্পর্কে আমাদের বোধগম্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে।

কীভাবে এই রং মানব চোখে ধরা দিলো তা বলার আগে চলুন জেনে নেই আমাদের চোখ রং দেখার ক্ষেত্রে কিভাবে কাজ করে। রঙ দেখার প্রক্রিয়া মূলত তিন ধরনের কোণ কোষের (cone cells) উপর নির্ভর করে: S (নীল), M (সবুজ) এবং L (লাল)। এই কোষগুলো বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শনাক্ত করে আর মস্তিষ্ক সেই সংকেতগুলো বিশ্লেষণ করে রঙের অনুভূতি তৈরি করে। 

গবেষকরা বিশেষ লেজার এবং ট্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কোণ কোষগুলোকে আলাদাভাবে উদ্দীপিত করেন, যা মস্তিষ্কে এক নতুন রঙের অনুভূতি সৃষ্টি করে।​ এই পদ্ধতিতে গবেষকরা প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর রেটিনার মানচিত্র তৈরি করেন এবং নির্দিষ্ট কোষগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করেন। এরপর, তারা লেজারের মাধ্যমে শুধুমাত্র M কোণ কোষ উদ্দীপিত করেন, যা সাধারণত সবুজ রঙের জন্য সংবেদনশীল। কিন্তু এই উদ্দীপনা S বা L কোষগুলোকে সক্রিয় না করেই সম্পন্ন করা হয়, ফলে মস্তিষ্কে একটি সম্পূর্ণ নতুন রঙের অনুভূতি সৃষ্টি হয়।​

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী পাঁচজন ব্যক্তি এই নতুন রঙটি দেখেছেন। তাদের মতে, এটি ময়ূরের পালকের নীল-সবুজ রঙের মতো, তবে এর উজ্জ্বলতা এবং তীব্রতা সাধারণ রঙের সীমার বাইরে। গবেষক রেন এনজি (Ren Ng), যিনি এই গবেষণার সহ-লেখক এবং অংশগ্রহণকারী ছিলেন, বলেন, ‘এই রঙের উজ্জ্বলতা এতটাই বেশি যে এটি সাধারণ রঙের সীমার বাইরে।’

গবেষণার সহ-লেখক অধ্যাপক রেন এনজি সহ অংশগ্রহণকারীরা নিশ্চিত করেছেন যে রঙটি তারা যা দেখেছেন তার থেকে আলাদা। তারা এটিকে প্রকৃতির যেকোনো পরিচিত রঙের চেয়ে বা ডিজিটাল রেন্ডারিংয়ের চেয়ে বেশি তীব্র বলে বর্ণনা করেছেন। আবিষ্কারটি আনুষ্ঠানিকভাবে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল এবং তারপর থেকে এটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে, যার মধ্যে বিবিসি রেডিও ৪-তেও রয়েছে যেখানে অধ্যাপক এনজি এর তাৎপর্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে বর্ণান্ধত্বের চিকিৎসায় ব্যবহার হতে পারে। বর্তমানে পদ্ধতিটি শুধুমাত্র একটি ছোট ভিজ্যুয়াল এলাকায় প্রয়োগ করা সম্ভব। তবে, গবেষকরা আশা করছেন যে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে বৃহত্তর ভিজ্যুয়াল এলাকায় নতুন রঙ প্রদর্শন করা সম্ভব হবে।​

সূত্র: লাইভ সাইন্স ও নেচার

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ