Home বিশ্ব ১৫ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড

১৫ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড

মোহাম্মদ রবিউল্লাহ
৪৭ views

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যে সাবেক প্রেমিকার বাবা-মাকে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ব্র্যাড সিগমন (৬৭) নামে এক ব্যক্তিকে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২০১০ সালের পর দেশটিতে এটিই প্রথম মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা। এ নিয়ে তিনবার এই ধরনের মুত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেয় দেশটির আদালত। এর আগে ১৯৭৭ ও ২০১০ আর সবশেষ ২০২৫ সালে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল দেশটি।

রাষ্ট্র-অনুমোদিত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দুটি পদ্ধতি-প্রাণঘাতী ইনজেকশন বা বৈদ্যুতিক চেয়ারের পরিবর্তে সিগমন ফায়ারিং স্কোয়াডকে বেছে নেন। সাউথ ক্যারোলাইনায় ব্রড রিভার কারেকশনাল ইনস্টিটিউশনে শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৮ মিনিটে একজন চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফায়ারিং স্কোয়াড 1

সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের ডেথ চেম্বার, ডানদিকে বৈদ্যুতিক চেয়ার এবং বামে ফায়ারিং স্কোয়াড চেয়ার, ছবি: স্কাই নিউজ

গত ১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার এ ধরনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো আমেরিকায়। জানা গেছে, ২০০১ সালে সিগমন তার সাবেক প্রেমিকার মা-বাবাকে বেসবল ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। মামলার নথিতে উল্লেখ রয়েছে, সিগমন তার প্রেমিকাকে অপহরণ করে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে তিনি তার প্রেমিকার মা-বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করেন।

আদালতে স্বীকারোক্তিতে সিগমন জানান, তিনি ছুটির দিনে প্রেমিকাকে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিলেন এবং এরপর নিজেও আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

ডেথ স্কোয়াড

দক্ষিণ ক্যারোলিনা সংশোধন বিভাগের সদর দপ্তর, এখানেই সিগমনের মৃত্যৃদণ্ড কার্যকর করা হয়, ছবি: স্কাই নিউজ

সিগমন মৃত্যুদণ্ড এড়াতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিলেন, তবে আদালত তা খারিজ করে। পরে সাউথ ক্যারোলাইনার গভর্নর হেনরি ম্যাকমাস্টারও প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য তাকে তিনটি পদ্ধতির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে বলা হয়—লিথাল ইনজেকশন, বৈদ্যুতিক চেয়ার ও ফায়ারিং স্কোয়াড। তিনি ফায়ারিং স্কোয়াড বেছে নেন।

সিগমনের আইনজীবী জেরাল্ড কিং বলেন, ‘লিথাল ইনজেকশন কিংবা ফায়ারিং স্কোয়াড—এই দুটি পদ্ধতির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে বলা হয়েছিল। যদি তিনি লিথাল ইনজেকশন বেছে নিতেন, তাহলে দীর্ঘ ও কষ্টদায়ক মৃত্যুর ঝুঁকি থাকত।’

সাক্ষীদের চেয়ার

ফায়ারিং স্কোয়াডের বাইরে সাক্ষীদের জন্য নির্ধারিত চেয়ার, ছবি: এনপিআর ডট অর্গ

সিগমনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় দক্ষিণ ক্যারোলিনার কলম্বিয়ার ব্রড রিভার কারেকশনাল ইনস্টিটিউশনে, যেখানে অঙ্গরাজ্যেটির সব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে অধিকাংশ মৃত্যুদণ্ড প্রাণঘাতী লিথাল ইনজেকশনের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়। তবে ১৫ বছর পর ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সিগমনের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সাউথ ক্যারোলিনার ফায়ারিং স্কোয়াডের বাইরে তার ছবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন অনেকে।

সিগমন

মৃত্যুদণ্ডের আগে সিগমনের পক্ষে সাইথ ক্যারোলিনায় বিক্ষোভ করেন অনেকে, ছবি: বিবিসি

বিক্ষোভকারীরা জানান, ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যৃদণ্ড কার্যকর করা আমেরিকার সংস্কৃতি নয়। এটি জার্মানির নাৎসি বাহিনী ও রাশিয়ার সংস্কৃতি।

তার আইনজীবী বলেন, বুধবার রাতে সিগমন বিশেষ অনুরোধকৃত খাবারটি গ্রহণ করেন। তাকে কেনটাকি ফ্রাইড চিকেন কেএফসি থেকে খাবার দেওয়া হয়, যার মধ্যে ছিল ম্যাশড আলু ও সবুজ বিন। চিজ কেক ও মিষ্টি চা পান করানো হয়।

২০২২ সালে দক্ষিণ ক্যারোলিনা সংশোধন বিভাগ ফায়ারিং স্কোয়াডের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য কক্ষের ব্যবস্থা এবং প্রোটোকল বিস্তারিতভাবে জানিয়েছিল। তিন সদস্যের ফায়ারিং স্কোয়াডের ব্যবহৃত রাইফেলগুলো প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে দৃশ্যমান করা হয় না। তিনটি রাইফেলই তাজা গুলি দিয়ে লোড করা থাকে।

বিক্ষোভ

জার্মানির নাৎসি ও রাশিয়ার সংস্কৃতি ফায়ারিং স্কোয়াড আমেরিকায় বন্ধের আহবান, ছবি: বিবিসি

ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল সার্জারির ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. জোনাথন গ্রোনার রোববার বলেন, ফায়ারিং স্কোয়াডে যে কেউ প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে অজ্ঞান হয়ে যায় এবং এর কিছুক্ষণ পরেই রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যু ঘটে বলে মনে করা হচ্ছে। তিন বা চারজন জল্লাদ হৃদপিণ্ডে গুলি ছুঁড়লে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রত্যক্ষদর্শী জেফ্রি কলিন্স জানান, সিগমনকে একটি কালো জাম্পস্যুট পরানো হয় এবং একটি চেয়ারে সম্পূর্ণভাবে বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়।

সিগমনের মাথার উপর একটি কাপড় লাগানোর আগে শেষ বক্তব্যটি পড়ে শোনানো হয়। কলিন্স বলেন, সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে গুলির শব্দ শোনা যায়। গুলি শুরু হলে প্রত্যক্ষদর্শীরা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভয়ে কাঁতরে ওঠে। পরে সিগমনের বুকে একটি ছোট লাল দাগ দেখা যায়।

সূত্র: এপি, এএফপি, সিএনএন ও স্কাই নিউজ

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ