শীতের পর আসে বসন্ত। আর বসন্ত শুধু একটি ঋতু নয়, এটি একটি অনুভূতি, এক নতুনের যাত্রা। বসন্তে প্রকৃতি যেমন নতুন রূপে সাজে তেমনি মনেও আসে নতুন উচ্ছ্বাস। বসন্তকালে মন মেজাজ ফুরফুরে থাকে। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। শীতের দীর্ঘস্থায়ী অন্ধকার ও ঠান্ডার পর ঝলমলে নরম রোদ ও উষ্ণতার স্পর্শ মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
চলুন বসন্তে মন ভালো থাকার কারণ গুলো জেনে নিই
আলো ও মন
মানুষের জীবনে আলোর কোনো বিকল্প নেই। শীতকালে দিনের আলো কমে যাওয়ায় শরীরে মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা ঘুম ও অলসতার দিকে ধাবিত করে। বসন্তে দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে মেলাটোনিনের উৎপাদন কমে যায় এবং সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা মেজাজ ভালো করে এবং সুখানুভূতি জাগায়। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে মাত্র ৩০ মিনিট সূর্যের আলো শরীরে সুখের অনুভূতি বাড়াতে সাহায্য করে।
হরমোনের পরিবর্তন
বসন্তের উজ্জ্বল আলো হরমোনের ভারসাম্যে পরিবর্তন আনে। আলো বাড়ার সাথে সাথে মেলাটোনিনের উৎপাদন কমে যায়, যা আমাদের আরও সজাগ ও সক্রিয় করে তোলে। একই সঙ্গে সেরোটোনিনের (হ্যাপি হরমোন) মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা মেজাজ উন্নত করে সুখানুভূতি জাগায়।
বসন্তের উজ্জ্বল আলো হরমোনের ভারসাম্যে পরিবর্তন আনে
রঙের প্রভাব
মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটালে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) হ্রাস পেয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।বসন্তে প্রকৃতি সবুজে সেজে ওঠে, যা মস্তিষ্কে প্রশান্তি ও স্বস্তির অনুভূতি জাগায়। সবুজ রঙ পিটুইটারি গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে স্বস্তি দেয়। হলুদ ও কমলা রঙ মনোবল বাড়িয়ে শক্তি যোগায়।
সামাজিক সম্পৃক্ততা
বসন্তের উষ্ণ আবহাওয়া ও দীর্ঘদিনের আলো বাইরে সময় কাটাতে উৎসাহিত করে। এতে করে বন্ধু ও পরিবারের সাথে বেশি সময় কাটাই, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সামাজিক সম্পৃক্ততা একাকীত্ব কমায়।
শারীরিক কার্যকলাপ
উষ্ণ আবহাওয়া হাঁটা, দৌড়ানো বা খেলাধুলা মতো শারীরিক কার্যকলাপে অংশ নিতে উৎসাহিত করে। এতে শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা প্রাকৃতিক পেইনকিলার হিসেবে কাজ করে।
বসন্ত মনের ওপর যে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে, তার পেছনে রয়েছে আলোর বৃদ্ধি, হরমোনের পরিবর্তন, রঙের প্রভাব, সামাজিক সম্পৃক্ততা ও শারীরিক কার্যকলাপের মতো বিভিন্ন কারণ। এই মৌসুমে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
সূত্র: হার্ভার্ড হেলথ, সাইকোলজি টুডে ও ওয়ার্ল্ড ক্রাঞ্চ
