অক্সিজেন ছাড়া জীবনযাপন অসম্ভব। কিন্তু আমাদের গ্রহের বায়ুমণ্ডল কিন্তু আজকের মতো ছিল না। এক সময় এখানে ছিলোনা কোনো অক্সিজেন, তখন প্রাণের বিকাশও ঘটেনি পৃথিবীতে। সেই অবস্থায় পৃথিবী ফিরছে বলে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তাদের আশঙ্কা পৃথিবী আবার অক্সিজেন স্বল্পতায় ফিরে যাবে, বিষাক্ত গ্যাস মিথেনে ভরে যাবে পৃথিবী।
সম্প্রতি নেচার জিও সাইন্স জার্নালে প্রকাশিত বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ভবিষ্যতে পৃথিবীর বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ এতটাই কমে যাবে যে মানুষের মতো জটিল প্রাণীদের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। গবেষকরা অত্যাধুনিক বায়োস্ফিয়ার মডেলিংয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় পরিবর্তনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছে।
মডেলটি অনুমান করে যে বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনেশন দ্রুত হ্রাস পেয়ে আর্চিয়ান পৃথিবীর মতো স্তরে নেমে আসবে, সম্ভবত পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থায় আর্দ্র গ্রিনহাউস অবস্থার সূচনা এবং বায়ুমণ্ডল থেকে ভূপৃষ্ঠের জলের ব্যাপক ক্ষতির আগেই শুরু হবে। তখন মানুষ এবং অক্সিজেনের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা বেশিরভাগ জীবের জন্য পথের শেষ হবে।
গবেষকরা তাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পৃথিবীর জীবমণ্ডলের বিস্তারিত মডেল তৈরি করেছেন, যেখানে সূর্যের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন এবং তাপমাত্রার বৃদ্ধির সাথে সাথে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রার সংশ্লিষ্ট হ্রাসকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এর আগে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে সূর্যের বর্ধিত বিকিরণ প্রায় ২ বিলিয়ন বছরের মধ্যে আমাদের গ্রহ থেকে সমুদ্রের জল শুকিয়ে ফেলবে, কিন্তু এখানে মডেলটি – প্রায় ৪ লক্ষ সিমুলেশনের গড় মানের উপর ভিত্তি করে – বলছে যে অক্সিজেনের হ্রাস প্রথমে জীবনকে শেষ করে দেবে।
জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির পৃথিবী বিজ্ঞানী ক্রিস রেইনহার্ড নিউ সায়েন্টিস্টকে বলেছেন, ‘অক্সিজেনের হ্রাস খুবই, খুবই তীব্র হবে, যার পরিমাণ আজকের অক্সিজেনের তুলনায় প্রায় এক মিলিয়ন গুণ কম।’
তবে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সম্ভবত আরও এক বিলিয়ন বছর বা তারও বেশি সময় ধরে এটি ঘটবে। পৃথিবীর অক্সিজেন-সমৃদ্ধ বাসযোগ্য ইতিহাস গ্রহের সামগ্রিক জীবনকালের মাত্র ২০-৩০ শতাংশ স্থায়ী হতে পারে – এবং আমাদের চলে যাওয়ার পরেও জীবাণু জীবন টিকে থাকবে।
গবেষকরা বলছেন বায়ুমণ্ডলীয় অক্সিজেন সাধারণভাবে বাসযোগ্য বিশ্বের স্থায়ী বৈশিষ্ট্য হওয়ার সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ চিরকাল পৃথিবীর প্রাণ ধরণের ক্ষমতা থাকবে না। এই ভবিষ্যৎবাণী মহাবিশ্বের আরও গভীরে প্রাণের লক্ষণ সনাক্ত করার আমাদের প্রচেষ্টার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এমনও হতে পারে বর্তমানে যে সকল গ্রহ বিষাক্ত গ্যাসে পরিপূর্ণ। হয়তো কোনো এক সময় পৃথিবীর মত তা অক্সিজেনে পরিপূর্ণ ছিল, সেখানে ছিল প্রাণের স্পন্দন।
এই গবেষণাটি বর্তমান দিনের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক কারণ আমরা সৌরজগতের বাইরে বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান করছি। ক্রমশ শক্তিশালী টেলিস্কোপ চালু হচ্ছে, এবং বিজ্ঞানীরা জানতে চান যে এই সরঞ্জামগুলি থেকে সংগৃহীত বিপুল পরিমাণে ডেটাতে তাদের কী সন্ধান করা উচিত। গবেষকরা বলছেন, জীবনের লক্ষণ সনাক্ত করার সর্বোত্তম সুযোগ পেতে হলে সম্ভবত আমাদের অক্সিজেন ছাড়াও অন্যান্য বায়োসিগনেচারগুলোর সন্ধান করতে হবে।
সূত্র: নেচার জিও সায়েন্স ও সায়েন্স এলার্ট