জাতীয় উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এই বছরে ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। যা গত অর্থ-বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকায়। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট ঘোষণায় এ তথ্য জানান।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আগামী অর্থবছরে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে অতিরিক্ত ৪ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।
তিনি আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সব নাগরিককে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে সেবার পরিধি বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও দক্ষ জনবল নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের শূন্য পদ পূরণে চিকিৎসক, সেবিকা, টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্য সহকারীদের নিয়োগ ত্বরান্বিত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উন্নত দেশসমূহের চাহিদা অনুযায়ী কেয়ারগিভার খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব হলে একদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসারিত হবে। একইসাথে প্রবাস আয় অর্জনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এ লক্ষ্যে কেয়ারগিভারদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এছাড়া নার্সিং শিক্ষায় পিএইচডি কোর্স চালু এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য একটি নার্স শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয় বিবেচনায় রয়েছে বলেও জানান তিনি। স্বাস্থ্য খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও, তারা বাস্তবায়ন সক্ষমতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও জনবল সংকটের কারণে আশাবাদী নন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, গত অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দকৃত বাজেট কিছুটা বেশি হলেও, স্বাস্থ্যের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, স্বাস্থ্য বিভাগের সামর্থ্য না থাকায় সেটিও খরচ করা যায় না। বাস্তবায়ন সক্ষমতা না থাকলে বরাদ্দ বাড়ানো সমস্যার সমাধান নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
চিকিৎসক নেতারা জানান, বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য ০.৭ জন চিকিৎসক ও ০.৪৯ জন নার্স রয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানদণ্ডের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা জনস্বাস্থ্য সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চিকিৎসক নেতারা স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি সুপরিকল্পিত রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ের ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন। তারা স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও, বাস্তবায়ন সক্ষমতা, জনবল সংকট ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের আশাবাদকে ম্লান করছে। তাদের মতে, বাজেট বৃদ্ধি একমাত্র সমাধান নয়। বরং এটি সুপরিকল্পিত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।