Home বাণিজ্য হোটেল-রেস্তোরাঁ, পোশাক, এলপিজিসহ ৪৩ পণ্য-সেবায় ভ্যাট বাড়ছে

হোটেল-রেস্তোরাঁ, পোশাক, এলপিজিসহ ৪৩ পণ্য-সেবায় ভ্যাট বাড়ছে

ইকবাল হোসেন
৮৮ views

হোটেল-রেঁস্তোরাসহ ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বাড়তে যাচ্ছে। এসব খাতে বর্তমানে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হয়। সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ভোক্তাদের শীঘ্রই হোটেল-রেঁস্তোরার খরচ, এলপিজি, পোশাক, বিমান ভ্রমণ, সিগারেটে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হতে পারে। কারণ সরকার এসব পণ্য ও পরিষেবার ওপর কর বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। এর ফলে দেশে ইতোমধ্যেই ১১ শতাংশ ছাড়ানো মূল্যস্ফীতি আরও তীব্র হতে পারে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রেস্তোরাঁয় ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। নন-এসি হোটেলের ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়া অভ্যন্তরীণ, সার্কভুক্ত দেশে এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্যে বিমান ভাড়াও বাড়তে পারে। বিমান টিকিটে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় ফ্লাইটে শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা, সার্ক দেশগুলোর ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ৩,০০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে এনবিআর ৩০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য স্থির করেছে।

হোটেল-রেঁস্তোরা ছাড়াও পোশাক খাতে ব্র্যান্ডেড ও নন-ব্র্যান্ডেড উভয় ধরনের পণ্যের ওপর ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। পাশাপাশি, ট্রেডিং কার্যক্রমে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ করা হতে পারে। এলপিজির ট্রেডিং পর্যায়ে ভ্যাটও ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। 

তামাকজাত পণ্যের দামও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৬০ টাকা হলেও এটি ১৭০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। উচ্চ, মাঝারি এবং নিম্ন স্তরের সিগারেটের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) যথাক্রমে ১৩০, ৮০ এবং ৫৫ টাকায় নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাকজাত পণ্যের দাম ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করে অর্থবছরের বাকি সময়ের মধ্যে ৪,০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকার বার্ষিক ব্যবসা টার্নওভারে ভ্যাট হার ৪ শতাংশ। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ৫০ লাখ টাকার বার্ষিক টার্নওভার অতিক্রম করা ব্যবসার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসার আকার বড় হলে হোটেল-রেঁস্তোরাও এর আওতায় থাকতে পারে। যেহেতু ৫০ লাখ টাকার নিচে টার্নওভারের ব্যবসাগুলোর জন্য ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক ছিল না, তাই এখন তা কমিয়ে ৩০ লাখ টাকায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। মাঝারি পরিসরের হোটেল-রেঁস্তোরা এর আওতায় আসতে পারে। ফলে, ৩০ লাখ টাকার বেশি টার্নওভার থাকলেই ভ্যাট নিবন্ধন করতে হবে।

পর্যটন উন্নত হলে হোটেল-রেঁস্তারার চাহিদা বাড়তে পারে। একইভাবে দিন দিন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে থাকায় বাড়ছে মেডিসিন ব্যবসা। মেডিসিন ব্যবসায়ও ভ্যাট বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেনার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ট্রেড ভ্যাট কার্যকর আছে, সেটি ৭.৫ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

মিষ্টি কিনতে গেলেও খরচ বাড়তে পারে ভোক্তার। কারণ, মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

উৎপাদন পর্যায়ে বিস্কুট, আচার, সিআর কয়েল, ম্যাট্রেস, ট্রান্সফরমার, টিস্যু পেপার খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসতে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড বানানোর সময়ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এনবিআর–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মদের পাশাপাশি আমদানি, উৎপাদন ও সেবা পর্যায়ে বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। যেমন আমদানি পর্যায়ে ফলের রসে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ; তামাকে ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ; সুপারিতে ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোনের কথা বলায় (টকটাইম) সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হতে পারে বলেও এনবিআর সূত্র জানায়।

ডিটারজেন্ট, সাবান এবং পেইন্টের মতো সাত ধরনের পণ্যের আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হতে পারে।

আইএমএফের নতুন রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের অংশ হিসেবে এনবিআর হোটেল-রেঁস্তোরা সহ ৪৩ পণ্য ও সেবা খাত থেকে ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে ১২,০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহের চেষ্টা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এমন পদক্ষেপ ভোক্তাদের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। আগামী অর্থবছর থেকেই প্রায় সব পণ্য ও সেবার ওপর একক ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কার্যকর করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। 

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ