ভৌতিক কোনো কাহিনী বলতে আমরা বুঝি সেখানে থাকবে ভূত, বিকৃত চেহারার পিশাচ কিংবা ভয়ংকর দর্শণ কোনো সত্তা। কিন্তু মাইক ফ্লানাগানের ভূতের রাজ্যে কিন্তু ভিন্ন। মানুষের মনোজগতের গভীরে নিমজ্জিত অভিজ্ঞতাও যে ভয়ের শিহরণ জাগাতে পারে, ফ্লানাগানের সৃষ্টি তাই প্রমাণ করে। ভয় ও অস্বস্তির মিশেলে এক অদ্ভুত অনুভূতির হরর ঘরানায় তিনি একটি স্বতন্ত্র ক্ষেত্র তৈরি করেছেন। তাই বর্তমানে মাইক ফ্লানাগান আধুনিক হররের প্রতিশব্দ হয়ে ওঠা একটি নাম।
ফ্লানাগান পরিচালিত জনপ্রিয় হরর সিরিজ গুলো সম্পর্কে জানতে ও জানাতেই হ্যালো বিডি বিনোদনের এই বিশেষ আয়োজন। যেখানে, শোক, হতাশা ও আক্ষেপের মতো অনুভূতিগুলোর সাথে অতিপ্রাকৃতিক বিষয়গুলোর মিশেলে একটি অন্যরকম ভূতের ভুবন তৈরি করবে। পাশাপাশি সিনেমা-প্রেমীদের দেখার তালিকায় যুক্ত করবে কয়েকটি নাম।
দ্য হান্টিং অফ হিল হাউস (২০১৮)
ভূতের চেয়ে ভয়ংকর আর কী হতে পারে? উত্তর হলো পরিবার। অন্তত ক্রেন পরিবারের জন্য এটাই সত্য। আই এম ডিবি ৮.৫ রেটিং পাওয়া ‘দ্য হান্টিং অফ হিল হাউস’ নেটফ্লিক্স মিনি-সিরিজটি শার্লি জ্যাকসনের উপন্যাস ‘দ্য হান্টিং অফ হিল হাউস’ এর কাহিনীর আলোকে নির্মাণ করা হয়েছে।
এই সিরিজে ফ্লানাগান আমাদের দুইটি টাইমলাইনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রথমটিতে দেখা যাবে তরুণ ক্রেন পরিবার, যেখানে বাবা হিউ (হেনরি থমাস) ও মা অলিভিয়া (কার্লা গুগিনো) পুরানো হিল হাউস সংস্কার করছেন। কিন্তু তারা সেখানে যত বেশি সময় থাকবেন তত তাদের সাথে অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকবে।
দ্য হান্টিং অফ হিল হাউস
দ্বিতীয় টাইমলাইনে, ২০ বছরেরও বেশি সময় পরে, পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক ক্রেন ভাইবোনের দেখা মিলবে যেখানে বুঝা যাবে বহু বছর আগে হিল হাউসে ঘটে যাওয়া ব্যাখ্যাতীত ঘটনা দ্বারা সবাই স্পষ্টভাবে প্রভাবিত, যা আজও তাদের তাড়া করে বেড়ায়। কী হয়েছিল হিল হাউসে ? তাদের বাবা মা এখন কোথায় ? হিল হাউসে যা হয়েছিল তা কি আদৌ সত্য নাকি কাল্পনিক কাহিনী ? জটিল এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে দেখতে হবে শ্বাসরুদ্ধকর দুই সিজনের এই হরর সিরিজটি।
দ্য হান্টিং অফ ব্ল্যাই ম্যানর (২০২০)
গল্পটি ৮০ এর দশকের লন্ডনে একজন শিক্ষিকা, ড্যানি ক্লাইটোনের (ভিক্টোরিয়া পেড্রেত্তি) জীবনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়। তাকে হেনরি উইংগ্রাভ (হেনরি থমাস) ব্লাই ম্যানরে তার এতিম ভাগ্নি এবং ভাগ্নের দেখভালের জন্য ন্যানি হিসাবে নিয়োগ করেন। সে বুঝতে শুরু করে যে বাড়িটিতে অন্য কোনো অশুভ শক্তির উপস্থিতি আছে।
দ্য হান্টিং অফ ব্ল্যাই ম্যানর
আগুনে গলিত মুখ, ঝিল পারের রহস্যময়ী মহিলা এবং কিছু ট্রিপি মিরর ট্রিক্সে ও জাম্পসকেয়ারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন যার রেশ সিরিজ শেষ হওয়ার পরেও রয়ে যাবে। আইএমডিবি ৭.৪ রেটিং পাওয়া সিরিজটিতে অলিভার জ্যাকসন-কোহেন, অ্যামেলিয়া ইভ, রাহুল কোহলি এবং টি’নিয়া মিলারও অভিনয় করেছেন।
মিডনাইট মাস (২০২১)
ড্রাঙ্ক ড্রাইভিং দুর্ঘটনায় এক মহিলার মৃত্যুর জন্য চার বছর কারাগারে থাকার পর, রাইলি ফ্লিন (জ্যাচ গিলফোর্ড) নিউ ইংল্যান্ডের ক্রোকেট দ্বীপে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। কট্টর ক্যাথলিক চার্জের অনুসারিদের বসবাস এই দ্বীপে। রাইলি এখানে এক নতুন অতিথির দেখা পান। রহস্যময় ফাদার পল (হামিশ লিংকলেটার) পুরানো চার্চের নিয়ম পরিবর্তন করতে আসেন। দ্বীপের অন্যরা তাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করলেও রাইলি দ্বিধা দ্বন্দে ভুক্তে থাকে। এই মিনি সিরিজটি ধর্মীয় বিশ্বাস, সম্প্রদায় এবং অতিপ্রাকৃত বিষয়গুলির নিয়ে আপনাকে নতুন ভাবে প্রশ্ন করতে শিখাবে।
মিডনাইট মাস
দ্য মিডনাইট ক্লাব (২০২২)
দ্য মিডনাইট ক্লাবটি ব্রাইটক্লিফ ম্যানরের একদল কিশোর কিশোরীদের বানানো একটি ক্লাব যেখানে সবাই প্রতি মধ্যরাতে ভূতের গল্প বলার জন্য দেখা করে। ব্রাইটক্লিফ ম্যানর আদতে একটি হসপিস। বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত কিশোর কিশোরীদের শেষ আশ্রয়স্থল। মিডনাইট ক্লাবের সদস্যরা এটি চুক্তি করে যে, তাদের একজন মারা গেলে তারা অন্য দিক থেকে গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে। উজ্জ্বল তরুণ অভিনেতাদের (ইমান বেনসন, রুথ কড, আনারাহ সাইমোন, উইলিয়াম ক্রিস সাম্পটার, এবং সৌরিয়ান সাপকোটা সহ) একটি কাস্ট নিয়ে এই সিরিজটি দেখায় কিভাবে জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে এই কিশোর কিশোরীরা একে অপরের সাথে মানসিক বন্ধন তৈরি হয়।
দ্য মিডনাইট ক্লাব
অলৌকিক ঘটনায় ঘেরা বাড়িতে ভুতুত্রে সব কর্মকান্ড যতনা দর্শকদের মনে ভয় জাগাবে তার থেকে বেশি কাঁদাবে। সিরিজটি হরর ফ্যানদের জীবন, বন্ধুত্ব ও মৃত্যুর একটি মর্মান্তিক এবং হিমশীতল অভিজ্ঞতা দিবে।
দ্য ফল অফ দ্য হাউস অফ আশার (২০২২)
এই নেটফ্লিক্স সিরিজটি এডগার আলান পো-এর ক্লাসিক গল্প ও বিভিন্ন চরিত্রের অনুপ্রেরণায় নির্মাণ করা হয়েছে। রডরিক আশার একজন অন্তর্মুখী মানুষ যিনি অভাব অনটনের জীবন থেকে মুক্তি পেতে এক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কর্মী হিসেবে যোগ দেন। কিন্তু স্বপ্ন দেখতেন নিজে বিজনেস টাইকুন হওয়ার।
দ্য ফল অফ দ্য হাউস অফ আশার
সারাজীবনের প্রচেষ্টায় একটি ফার্মাসিউটিক্যাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন রডরিক আশার। সেই সাম্রাজ্যের ধ্বংসাত্মক পতন, এটি নিয়েই এই সিরিজের কাহিনী। সম্পদ ও জৌলুসে পরিপূর্ণ আসার পরিবারে হুট করেই যেন নেমে আশে অন্ধকার। রডরিকের ছয়জন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান রহস্যজনকভাবে মারা যেতে শুরু করে। কিন্তু এই মৃত্যুগুলোর সাথে অতীতের যোগ সূত্র আছে কী ? রডরিক কি আগে থেকেই জানতো তার সন্তানদের করুণ পরিণতি? আসার পরিবারের সব মৃত্যুর সাথে দাঁড়কাকের ই বা সম্পর্ক কি ? জানতে হলে দেখতে হবে আই এম ডি বি ৭.৯ রেটিং পাওয়া এই সিরিজটি।
সচরাচর ভৌতিক কাহিনী যেখানে অশরীরী সত্তার উপস্থিতির ওপর নির্ভরশীল, সেখানে ফ্লানাগান ক্যারেকটারের চরিত্র ও তার বিকাশকে বেশি প্রাধান্য দেন। তার গল্পগুলি প্রায়শই জটিল মানসিক অবস্থা, পারিবারিক সম্পর্ক এবং অতীতের ট্রমা অন্বেষণ করে, যা ভয়কে আরও তীব্র করে তোলে। এ কারণেই হরর ভক্তরা ফ্লানাগানের ভৌতিক জগৎ এত বেশি পছন্দ করেন।
