Home বিনোদন ছবি গপ্পো:  সল্ট এন পিপার

ছবি গপ্পো:  সল্ট এন পিপার

নিজস্ব প্রতিবেদক
১০৭ views

একটি সাহিত্যিক রিভিউ

মহেন্দ্র প্রতাপ সিং পরিচালিত ‘সল্ট এন পিপার’ একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ২০১৩ সালে পকেট ফিল্মসের ইউটিউব পেজে এই চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। দুটি চরিত্রকে ঘিরে ছবিটির গল্প আবর্তিত হয়েছে। এরমাঝে একজন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। তখনো নওয়াজুদ্দিন ষ্টার হননি। অপর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তেজস্বীনি কোলহাপুরি।   

নারী পুরুষের সম্পর্কের বাইরেও বিশাল একটি জগৎ আছে এমনই একটি ধারণাকে পরিচয় করিয়ে দিতেই পরিচালকের এই আয়োজন। সমাজে প্রতিষ্ঠিত বিত্তের বৈষম্য ও তার সাথে নানাশ্রেণির মানুষের সম্পর্ক নিয়ে খেলা করে ‘সল্ট এন পিপার’। আমরা বুঝতে পারি আমাদের যাপিত জীবনের ছোট্ট পরিধির মাঝে দুনিয়াটা শেষ হয়ে যায় না। দুনিয়াটা আসলে আরো বড়, তেমনই বড় করতে হবে আমার চিন্তা।

ধনীর দুলালী বিশাল বাসায় একা একা রাত কাটাচ্ছে। মেয়েটি প্রেমে ব্যর্থ। দেবদাস চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্য দেখছে আর কাঁদছে সে। শেষবারের মতো চেষ্টা করেও ফোনকলে প্রেমিককে বোঝাতে পারলো না। উল্টো ফোনে এতটাই অপমানের শিকার হয় যে জীবন তার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ে। আত্মহননের পথ বেছে নেয় সে। কারণ আত্মহত্তা করে তার প্রেমকে মহৎ করে সে অমর হতে চায়। এইসব সিদ্ধান্তের পিছনে দেবদাস চলচ্চিত্র যে কামনাকে বিক্রি করছে সেটিকেই ধারণ করতে চেয়েছে এই মেয়েটি। কামনার মায়াজালে ঢাকা পড়ে যায় তার আসল অস্তিত্ব।

এমন সময় ঘরে আসে এক চোর! চোরকে দেখে মেয়েটি প্রচণ্ড ভয়ে চমকে উঠলেও খুশিই হয়। ট্রেন্ডের শিকার হয়ে নিজের জীবন দিতে নিলেও তার হুঁশ হয়েছে বলতে হবে। চোরটি নিশ্চিত করে সে চুরি করতে আসেনি। সে মূলত খেতে এসেছে। তা দেখে মেয়েটির মায়া হয়। সে এই ক্ষুধার্ত ব্যক্তিটিকে খাইয়ে তারপর মরার পরিকল্পনা করে। বাসায় খাওয়ার কি আছে খুঁজতে গেলে আগন্তক জানিয়ে দেয় বাসায় খাওয়ার কিছু নেই সে ইতোমধ্যে সব জায়গা দেখে ফেলেছে কোথাও কিচ্ছু নেই।

অগত্যা মেয়েটি ফুড ডেলিভারিতে পিৎজা অর্ডার করে। হোম ডেলিভারি, আধা ঘন্টা লাগবে। এই আধা ঘন্টায় তারা নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলাপে জড়িয়ে পড়ে। মেয়েটি তার প্রেম নিয়েই কথা বলতে থাকে যেহেতু সেই বিষয়েই সে আচ্ছন্ন। সত্যিকারের ভালোবাসা আসলে কি তা নিয়ে কথার ফুলঝুরি ফোটায়। পিৎজা হাজির হয়, মেয়েটির খিদা চাগিয়ে ওঠে। অথচ একটু আগেই সে মরতে চেয়েছিল! পিৎজার সাথে আসা পেপার বা গোল মরিচ গুড়োর প্যাকেটটি আগুন্তকের দিকে এগিয়ে দেয় মেয়েটি। তখন আগন্তক অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। সে আর পিৎজা খাবেনা বলে জানায়। মেয়েটি অবাক হয়ে কারণ জানতে চায়লে সে বলে, ‘‘আমি মূলত একজন কৃষক ম্যাডাম। আমার ক্ষেতে এই পিপার মানে কালো গোল মরিচ চাষ হতো। আর এই ব্যবসা ছিলো সবচেয়ে লাভজনক। আট বছর আগেও ১কুইন্টালের দাম ছিলো ২৭,০০০ রুপি। গত বছরই তা বেচলাম ৬,০০০এ! এই পিৎজার সাথে যেটা খাচ্ছেন এই মরিচ-টা লোকাল মরিচ না মেমসাহেব। বিদেশী জিনিস। সরকার পলিসি বানিয়েছেন অন্য দেশের মাল আমদানির জন্য! কফি, আপেল কত কি! কিন্তু আমি যা উৎপাদন করি তার কি হবে? তার  উপরে খরা, বন্যা আছে কত কী! আপনিই বলেন মেমসাহেব কৃষক মরবে নাতো কি হবে? আমার ভাই যেমন আত্মহত্যা করলো। যাই হোক আপনি কেন মরতে চান ম্যাডাম? আপনার সব আছে। ভালো ছেলেও হয়তো জুটে যাবে। কিন্তু আমাদের কি হবে? আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন ম্যাডাম খাওয়া আনিয়ে কিন্তু আমি এটা খেতে পারবো না আমায় মাফ করবেন।’’


মেয়েটি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। বাস্তবতা সজরে আঘাত করে তাকে। মেয়েটির মতই আমাদের মনটাও পণ্যে পরিণত হয়েছে। বিষণ্ণতা এখন খুব প্রচলিত মানসিক রোগে পরিণত হয়েছে কারণ আমরা জনবিচ্ছিন্ন এক জাতিতে রূপান্তরিত হয়েছি। ভোগের বিরাট দুনিয়া থেকে মুক্ত করতে ‘সল্ট এন পিপার’ একটি ছোট ধাক্কা।

https://www.youtube.com/watch?v=1nUAPIysIdE

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ