অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। নির্বাচিত সরকার না থাকায় জাতীয় সংসদের বাইরে প্রস্তাবিত বাজেট বিটিভির মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবেন তিনি।
এটি হবে দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর প্রয়োজনীয় সংশোধন করে জুন মাসের শেষ দিকে জারি হবে অর্থ বিল। বরাবরের মতো এবারও তা কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী ২ জুন সোমবার বিকেল ৪টায় বিটিভিতে বাজেট বক্তব্য প্রচার করা হবে। তবে এটি লাইভ হবে না। অর্থ উপদেষ্টা রামপুরার বিটিভি কার্যালয়ে গিয়ে বাজেট বক্তব্যের কিছু অংশ পড়ে রেকর্ড করে আসবেন, যা ৪টায় প্রচার করা হবে। ধারণকৃত বাজেট বক্তব্য বাংলাদেশ বেতার থেকেও প্রচারিত হবে। জাতীয় বাজেটের ব্যাপক প্রচার নিশ্চিত করার জন্য সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলোকে বিটিভি থেকে ফিড গ্রহণ করে অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতা সম্প্রচার করতে বলা হয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাজেটের বই দেওয়া হবে এবার সচিবালয়ে অবস্থিত তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) থেকে।
আজ সোমবার সকাল ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের মিটিং হবে। সেখানে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে। তারপরই অর্থ উপদেষ্টা বিটিভি কার্যালয়ে বাজেট প্রস্তাব রেকর্ড করতে যাবেন। সব মিলিয়ে ৪০-৪৫ মিনিটের বক্তব্য রেকর্ড করা হবে, যা বিকেল ৪টা থেকে বিটিভি প্রচার করবে। বাজেট বক্তব্যের বাকি অংশ পঠিত বলে গণ্য হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও (https://mof.gov.bd/) অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তব্য শোনা যাবে। এজন্য ইতোমধ্যেই ওয়েবসাইটিকে বিটিভি’র সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এখন এতে টেস্ট স্ট্রিমিং (ওয়েব) হিসেবে বিটিভি’র প্রোগ্রামগুলো দেখা যাচ্ছে।
নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়—বাজেট পেশের দিনই জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনের পর—বিকেলে সংসদ সদস্যদের সামনে অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাব লাইভ তুলে ধরেন, টেবিল চাপড়িয়ে যার পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান তুলে ধরেন সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিটিভিতে বাজেট বক্তব্য রেকর্ড করার সময় ক্যামেরার সামনে শুধু অর্থ উপদেষ্টা থাকবেন। সরকারের আর কোন উপদেষ্টা বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেখানে থাকবেন না।
প্রতিবছর সাধারণত জুন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়। এবছর ৫ জুন প্রথম বৃহস্পতিবার হলেও ওইদিন থেকে ঈদের সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায়, ২ জুন বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। প্রথা মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
নির্বাচিত সরকারের সময় বাজেট ঘোষণার পর— জুন মাস জুড়ে সংসদ সদস্যরা বাজেটের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো সংসদে তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। তার প্রেক্ষিতে ২৯ জুন অর্থবিল সংশোধন করে পাস করে সংসদ, পরদিন বাজেট পাস করা হয়।
সব সময়ই বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই প্রস্তাবিত অর্থবিল কার্যকর করে থাকে সরকার। এবারও বাজেট প্রস্তাবের দিন থেকেই রাজস্বখাতে প্রস্তাবিত কর, ভ্যাট ও শুল্কহারগুলো কার্যকর করা হবে।
অর্থবিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এবছর সংসদ কার্যকর না থাকায়— অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর মতামত জানানোর সুযোগ থাকছে। অন্যান্য বছর এ ধরণের সুযোগ থাকলেও—সেখানে খুব বেশি মতামত পাওয়া যেতো না। এবছর অনলাইনে প্রাপ্ত মতামত ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে, অধ্যাদেশ আকারে বাজেট পাস করার সময় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার বিষয়টি ভাববে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
তিনি জানান, এবারও ২৯ জুন রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সংশোধন শেষে অর্থবিল ও পরদিন প্রস্তাবিত বাজেট অধ্যাদেশ আকারে জারি করে ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।
বরাবরের মতো এবারও অর্থ বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, পরিকল্পনা কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বাজেট বক্তব্য আপলোড করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়।
সবশেষ ২০০৮-৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল সংসদের বাইরে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।