Home বাণিজ্য বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা

বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা

ইকবাল হোসেন
৩২ views
বিনিয়োগ

দেশে বিদেশি বিনিয়োগে মন্দাভাব বিরাজ করছে। গত কয়েক মাসে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ ব্যাপক হারে কমেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) মাত্র ২৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছে। এই অঙ্ক গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭২ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৯০ কোটি ডলার নিট এফডিআই এসেছিল দেশে।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক নানা সমস্যা এফডিআই কমার বড় কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশে বিনিয়োগের অনুকুল পরিবেশ নেই। দেশি বিনিয়োগকারীরাই কোনও বিনিয়োগ করছেন না। এমন অবস্থায় বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, এটাই বাস্তবতা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশি বিনিয়োগের মন্দাভাব চলছে। ব্যবসায় পরিবেশবান্ধব পরিস্থিতির কোনও উন্নতি নেই। আবার স্থানীয় বা দেশি বিনিয়োগও খুব বেশি বাড়ছে না। এসব কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। দেশি বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে না।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, বিনিয়োগের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে অনুকূল পরিবেশ। সেই পরিবেশটা থাকলে দেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের দেশে বিনিয়োগ করেন। সেই পথ অনুসরণ করে বিদেশি বিনিয়োগারীরাও ওই দেশে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসেন। দেশি বিনিয়োগ না হলে বিদেশিরাও ওই দেশে বিনিয়োগ করতে আসেন না।

তিনি বলেন, অনিশ্চয়তা-অস্থিরতায় দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা এখন নতুন বিনিয়োগ না করে বসে আছেন। অপেক্ষা করছেন, পরিবেশের উন্নতি হলে বিনিয়োগ করবেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও সেই একই পথ অনুসরণ করছেন। তাই এফডিআই-এর এই করুণ দশা হয়েছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম সাত মাসে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ২৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছে। ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এসেছিল ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে মাত্র ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছে বাংলাদেশে।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৯০ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছিল। ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এসেছিল ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর পুরো অর্থ বছরে (১২ মাস, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) এসেছিল ১৪৭ কোটি (১.৪৭ বিলিয়ন) ডলার, যা ছিল আগের অর্থ বছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ কম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে নিট এফডিআইর পরিমাণ ছিল ১৭১ কোটি (১.৭১ বিলিয়ন) ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ১৬১ কোটি (১.৬১ বিলিয়ন) ডলারে নেমে আসে।

সম্প্রতি প্রকাশিত জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) ‘বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ এবং প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগে বড় ঝুঁকিগুলো হচ্ছে- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অস্বচ্ছ নীতি ব্যবস্থাপনা, জটিল কর প্রক্রিয়া, অস্বচ্ছ ও মানহীন আইনি ব্যবস্থাপনা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিনিয়োগ অনুমতি ও নিবন্ধন সনদ পেতে সময়ক্ষেপণ ইত্যাদি। 

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ