সভরেন ওয়েলথ ফান্ড বা সার্বভৌম সম্পদ তহবিল হলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ তহবিল। লাভজনক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম সামনে এলেও রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। সভরেন ওয়েলথ ফান্ড ইনস্টিটিউট সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে স্থানীয় সরকারভিত্তিক বিনিয়োগ তহবিলকে আর্থিক আকারের দিক থেকে তালিকাভুক্ত করেছে।
এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে গভর্নমেন্ট পেনশন ফান্ড। সংস্থাটির হাতে রয়েছে ১ দশমিক ৭৩ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ। এটি নরওয়েজিয়ান সরকারি সংস্থা, যা রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের পেনশন প্রদান করে। এর সদস্য সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি এবং এর মোট সম্পদের পরিমাণ ২৭০ বিলিয়ন নরওয়েজিয়ান ক্রোনা।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চায়না ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির হাতে রয়েছে ১ দশমিক ৩৩ ট্রিলিয়ন ডলারের তহবিল। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এর সদর দপ্তর। চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি অংশ পরিচালনা করে এ তহবিল। চীনের বৃহত্তম সার্বভৌম তহবিল , সিআইসি ২০০৭ সালে প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা ২০২১ সালে ১.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছিল।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে চীনের সেইফ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি। এ সংস্থার হাতে রয়েছে ১ দশমিক শুন্য ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ। তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে আবুধাবি ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি। এ কোম্পানির হাতে রয়েছে ১ দশমিক শুন্য ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ। আবুধাবি বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের পক্ষে তহবিল বিনিয়োগের জন্য প্রতিষ্ঠিত । এটি আমিরাতের অতিরিক্ত তেল মজুদ পরিচালনা করে।
তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে কুয়েত ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি বা কুয়েত বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ (কেআইএ)। এ সংস্থার হাতে রয়েছে ১ দশমিক শুন্য ২ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ। এটি কুয়েতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সার্বভৌম সম্পদ তহবিল। দেশটির রিজার্ভ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের তহবিল পরিচালনা করে কেআইএ। এটি ‘আজয়াল তহবিল’ নামেও পরিচিত। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কেআইএ হল বিশ্বের প্রাচীনতম সার্বভৌম সম্পদ তহবিল।
তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড। এটির মোট সম্পদ ৯২৫ বিলিয়ন ডলার। ১৯৭১ সালে সৌদি আরব সরকারের পক্ষে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে এ তহবিল গঠন করা হয়েছিল। এ তহবিলের ৬০ শতাংশের বেশি কার্যক্রম সৌদি আরবের মধ্যেই পরিচালিত হয়।
তালিকায় সপ্তম অব স্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুরের জিআইসি প্রাইভেট লিমিটেড। এটির মোট সম্পদ ৮০০ বিলিয়ন ডলার। সার্বভৌম সম্পদ তহবিলটির মাধ্যমে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিচালনা করে। ১৯৮১ সালে সিঙ্গাপুর সরকার কর্তৃক সিঙ্গাপুর বিনিয়োগ কর্পোরেশন নামে প্রতিষ্ঠিত, যার সংক্ষিপ্ত রূপ জিআইসি। এটির লক্ষ্য হল রিজার্ভের আন্তর্জাতিক ক্রয় ক্ষমতা সংরক্ষণ এবং বৃদ্ধি করা।
তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি, এটির মোট সম্পদ ৬০০ বিলিয়ন ডলার। নবম স্থানে রয়েছে কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি, যার মোট সম্পদ ৫২৬ বিলিয়ন ডলার। কাতার বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ হল কাতারের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল । নতুন সম্পদ শ্রেণীতে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য ২০০৫ সালে এ তহবিল গঠন করা হয়। তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে হংকং মনিটারি অথরিটি ইনভেস্টমেন্ট পোর্টফোলিও, এটির মোট সম্পদ ৫১৪ বিলিয়ন ডলার।
সার্বভৌম সম্পদ তহবিল বা এসডব্লিউএফ থেকে স্টক, বন্ড, রিয়েল এস্টেট, মূল্যবান ধাতু, প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড বা হেজ ফান্ডের মতো বিকল্প বিনিয়োগে অর্থায়ন করা হয়। এ বিনিয়োগের পরিসর স্থানীয় পর্যায়ে সীমিত থাকে না, বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হতে পারে। এসডব্লিউএফের পরিচিত উৎস হলো পণ্য রফতানি আয় বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কিছু সার্বভৌম সম্পদ তহবিল একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকতে পারে, যা একটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ব্যবস্থাপনার সময় তহবিল সংগ্রহ করে। এই ধরণের তহবিল সাধারণত অর্থনৈতিক এবং আর্থিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।