পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে চিনি, ছোলা, ডাল, তেল, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি করা হয়েছে। খালাসের অপেক্ষায় আছে অনেক ভোগ্যপণ্য। তারপরও কমছে না পণ্যের দাম।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টন; যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬ কোটি ৫৮ লাখ টন।
জানুয়ারিতে পাম ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টন। চিনি আমদানি হয় ১ লাখ ৫৩ হাজার টন। ডাল আমদানি হয় ১ লাখ ৯৫ হাজার টন। জানুয়ারিতে ছোলা আমদানি হয়েছে ৯৭ হাজার ১৮১ টন। খেজুর আমদানি হয়েছে ২১ হাজার ২৬১ টন। এভাবে রমজানের প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি হওয়ায় বাজারে সংকট থাকবে না বলে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে চিনি, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, ডালসহ অনন্যা আমদানি নির্ভর পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম অনেকটাই চড়া। অভিযোগ আছে, বাজারে দাম বাড়ানোর কৌশল হিসাবে আমদানিকারকরা বন্দরে পণ্য খালাস না করে সাগরে ভাসমান গুদামে রেখেছেন। তাই পণ্য আমদানি বেশি হলেও রমজানে দাম বাড়ার শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্যপণ্যের বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, খুচরা বাজারে বুধবার (১২ জানুয়ারি) বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকা, দুই লিটার ৩৮০ টাকা ও পাঁচ লিটার ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি কেজি ১২৫-১৩০ টাকায়, ছোলা কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, মসুর ডাল কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সাধারণ মানের খেজুর কেজি ২৬০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারের ব্যবসায়ী ইব্রাহিম খলিল বলেন, এবার রমজান উপলক্ষে সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য কোনো ভোগ্যপণ্যের ঘাটতি নেই। তাই এবার রোজা উপলক্ষে দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই; বরং বাজারে সরবরাহ বাড়ায় এক মাসের ব্যবধানে ছোলার দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
তিনি বলেন, দুই মাস ধরেই বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। দু-একজন ডিলার তেল দিতে চাইলেও শর্ত দিচ্ছেন তেলের সঙ্গে চিনি, লবণ, আটা, মসলাজাতীয় পণ্য ও পোলাও চালের বস্তা নিতে হবে। এতে দোকান চালাতে বাধ্য হয়েই এসব শর্ত মেনেই তেল নিচ্ছে অনেকেই।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, সরকারের তরফ থেকে যতটুকু করা সম্ভব ছিল, সরকার শুল্ক ছাড় দিয়েছে, যাতে রমজানে সবচেয়ে ব্যবহৃত পণ্যগুলোর দাম কমে। শুল্ক ছাড়ের কারণে আমদানিকারকরা পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি করেছেন। এতে এবার রোজায় ভোগ্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি হবে না; বরং দামটি নিম্নগামী থাকবে। তাতে রমজানে সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসবে।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের আচার-আচরণে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন জরুরি। দেখা যায়, পেঁয়াজ আমাদের ভারত থেকে আমদানি করতে হয়, তখন দাম বেড়ে গেলে আমাদের এখানেও দাম বাড়ে। কিন্তু যখন কমে যায় তখন কিন্তু ব্যবসায়ীরা কমায় না। আগামী রমজানে যেসব পণ্য রয়েছে, সেগুলোর পর্যাপ্ত আমদানি আছে। তবু দেখা যাবে, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেবে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করবে। এখানে আমাদের ব্যবহারের অনুশীলনে পরিবর্তন করতে হবে।