গত শীতে আফগানিস্তান থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত হিন্দুকুশ-হিমালয় পর্বতমালায় যে পরিমাণ তুষারপাত হয়েছে, তা গত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি এমন ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারে বসবাসকারী ২০০ কোটি মানুষ চরম বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে পড়বেন।
হিমালয় পর্বতমালার যে অংশটি আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছে, সেটি ‘হিন্দুকুশ রেঞ্জ’ নামে পরিচিত। দক্ষিণ ও উত্তর মেরুর পর সবচেয়ে বেশি বরফের মজুত রয়েছে পুরো হিমালয় পর্বতমালায়। লাখ লাখ বছর ধরে তুষারপাতের ফলে সঞ্চিত হয়েছে এই বরফ।
তবে পর্বত পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেড (আইসিআইএমওডি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাধারণত প্রতি বছর শীতে হিমালয়ে পর্বতমালায় যে পরিমাণ তুষারপাত হয়, গত তিন বছর ধরে তার তুলনায় কম হচ্ছে। গত শীতে যে পরিমাণ তুষার পড়েছে, তা গত ২৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

ছবি: ইনকোয়ারর ডট নেট
“যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে হিমালয় অঞ্চলের দেশগুলোর নদীগুলোতে পানির প্রবাহ কমে যাবে, ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়বে, তাতে শিগগিরই আফগানিস্তান থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত ভূখণ্ডের একটি বিশাল অংশ খরা কবলিত হবে। এ ছাড়া তুষারপাতের পরিমাণ কমতে থাকলে এই ভূখণ্ডে দাবদাহের দৈর্ঘ্য ও হার দুইটাই বাড়তে থাকবে।
আইসিআইএমওডি’র প্রতিবেদনের প্রধান লেখক শের মুহম্মদ বলেন, “অন্যান্য বছর ডিসেম্বরের শুরু হিমালয় পর্বতমালায় থেকে তুষারপাত শুরু হলেও এবার তুষারপাত শুরু হয়েছে জানুয়ারির শেষ দিক থেকে। এবারের তুষারপাতের পরিমাণও ছিল গড় পরিমাণের চেয়ে কম।”
আফগানিস্তান থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত হিন্দুকুশ-হিমালয় পর্বতমালা আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিকার পরে বরফ ও তুষারের সবচেয়ে বড় মজুদস্থল। একই সঙ্গে প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষের নিরাপদ ও সুপেয় পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। হিন্দুকুশ-হিমালয়ে তুষারপাত কমে যাওয়ায় প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষের নিরাপদ পানির উৎস হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

ছবি: ফ্রান্স২৪
এরই মধ্যে এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশ খরার সতর্কতা জারি করেছে। ফসল ও পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।প্রতিবেদন অনুসারে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ দুটি নদী, মেকং ও সালউইন অববাহিকায় তুষারঢাকা এলাকা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
আইসিআইএমওডির মহাপরিচালক পেমা গিয়ামটসো দীর্ঘমেয়াদি বরফের স্বল্পতা মোকাবেলায় নীতিমালায় পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কার্বন নিঃসরণ এরই মধ্যে এইচকেএইচে (হিন্দুকুশ-হিমালয়) নিয়মিত তুষারপাতে অস্বাভাবিকতার এক অপরিবর্তনীয় ধারা সৃষ্টি করেছে।’
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) গত মাসে জানায়, গত ছয় বছরের মধ্যে পাঁচ বছরেই হিমবাহ সবচেয়ে দ্রুতগতিতে গলেছে। আর সবচেয়ে বেশি জলবায়ু-সম্পর্কিত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হলো এশিয়া।

ছবি: এএফপি
আইসিআইএমওডি একটি আন্তঃসরকার সংস্থা। হিমালয় পর্বতমালা অঞ্চলের আট দেশ আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভূটান, চীন, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের সরকারি প্রতিনিধিরা রয়েছেন এই সংস্থায়। প্রতিবেদনে হিমালয় থেকে উৎপন্ন ১২টি বড় নদী রক্ষায় শিগগিরই পদক্ষেপ নিতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
আইসিআইএমওডির নির্বাহী পরিচালক পেমা গিয়ামাৎসো বলেন, “আমরা যদি কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, তাহলে যত পদক্ষেপ নেওয়া হোক না কেন— সেসব টেকসই হবে না।”
সূত্র: জিও নিউজ ও এএফপি