Home সফল মুখ শুধু ব্যবসা নয়, রাজনীতিতেও সেরা মাইকেল ব্লুমবার্গ

শুধু ব্যবসা নয়, রাজনীতিতেও সেরা মাইকেল ব্লুমবার্গ

মোহাম্মদ রবিউল্লাহ
৮২ views

কিছু মানুষ সাফল্যকে পরিপূর্ণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে, যা অন্যরা মর্যাদা ও কৃতিত্ব হিসেবে দেখে। এমনই এক ব্যক্তি মাইকেল ব্লুমবার্গ। যিনি একাধারে উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক। বিশ্বব্যাপী আর্থিক ও বাণিজ্যের পাশাপাশি তথ্য প্রদানকারী সংস্থা ব্লুমবার্গের কর্ণধার তিনি। নিজের কোম্পানি গঠনের আগে সিকিউরিটিজ ব্রোকারেজ ফার্ম স্যালোমন ব্রাদার্সে কর্মজীবন শুরু করেন এই ধনকুবের।

বিনিয়োগ শিল্পে বিপ্লব

১৯৮১ সালে মাইকেল ব্লুমবার্গ তথ্য প্রযুক্তি স্টার্ট-আপ ব্লুমবার্গ এলপি চালু করেন, যা পরবর্তীতে বিনিয়োগ শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে। একই সাথে তার হাতে গড়া এই কোম্পানিটি ছোট ছোট কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর জন্য নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে। ব্লুমবার্গ এলপির অধীনে আর্থিক তথ্য সরবরাহ, সফ্টওয়্যার ও মিডিয়া ফার্মসহ কয়েক ডজন কোম্পানি পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরবর্তী ২০ বছর এই কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ব্লুমবার্গ

১৯৮১ সালে মাইকেল ব্লুমবার্গ তথ্য প্রযুক্তি স্টার্ট-আপ ব্লুমবার্গ এলপি চালু করেন, ছবি: ওয়াশিংটন পোস্ট

বিলিয়ন ডলার আয় 

ব্লুমবার্গ এলপির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ব্লুমবার্গ বর্তমানে এই কোম্পানির ৮৮ % শেয়ারের মালিক; যার আয় ১৩ বিলিয়নের ডলারের বেশি। প্রাথমিকভাবে কোম্পানিটি ওয়াল স্ট্রিট বিনিয়োগ ব্যাংকের কাছে কম্পিউটার টার্মিনাল বিক্রি করেছিল। যাতে স্টক, বন্ড ও অন্যান্য বিনিয়োগের আর্থিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। ব্লুমবার্গ টেলিভিশন ২৪ ঘণ্টা আর্থিক বিষয়ক সংবাদ প্রকাশ করে থাকে।

টিভির পাশাপাশি রেডিও,পত্রিকা, ম্যাগাজিনেও বহু আর্থিক তথ্য সরবরাহে সিংহ ভাগ দখল করে আছে ব্লুমবার্গ। ব্লুমবার্গ গ্রুপের সংবাদ প্রতিবেদনের ওপর কোম্পানির শেয়ারের দাম নির্ভর করে। বর্তমান দুনিয়ায় নির্ভরযোগ্য আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমানভাবে ধ্রুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন ব্লুমবার্গ। ২০০৯ সাল থেকে ‘ব্লুমবার্গ বিজনেস উইক’ নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়ে আসছে। বণিক ও ধনকুবের থেকে শুরু করে সব শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয় এই ম্যাগাজিন।

Dinner

আলফ্রেড ই. স্মিথ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের ২০২৪ সালের নৈশভোজে যোগ দেন মাইক ব্লুমবার্গ, ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস

সফল রাজনীতিবিদ
ব্লুমবার্গ ২০০২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১২ বছর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলার কিছু দিন পরই তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন। তার নেতৃত্বে নিউ ইয়র্ক শহর দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায়। একইসাথে অর্জন করে বিশ্বের উন্নত শহরের তকমা। দিন দিন তিনি আমেরিকার প্রাণ তথা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যস্ততম শহর হিসেবে নিউ ইয়র্ককে অনন্য করে তোলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহল থেকে ২০২০ সালে স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দাবি উঠে তার পক্ষে। জন দাবির মুখে ওই বছর প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার ঘোষণাও দেন তিনি। তবে স্বতন্ত্র নয়, দলীয়ভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় পরবর্তীতে ‘প্রেসিডেন্টিশিয়াল রেস’ থেকে সরে দাঁড়ান মাইকেল ব্লুমবার্গ।

ওয়াল স্ট্রিটে পথচলা
কিশোর বয়সে মাইকেল ব্লুমবার্গ ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজে একটি ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে কাজ করতেন। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তার মাতৃসদন জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটিতে ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। পূর্ণকালীন সমাজসেবক হিসেবে একটি সংক্ষিপ্ত পদক্ষেপের পরে, ব্লুমবার্গ এলপিতে সিইও পদে ২০১৪ সালে পুনরায় দায়িত্ব নেন। ১৯৬৬ সালে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক স্যালোমন ব্রাদার্সে এন্ট্রি লেভেলের চাকরির মাধ্যমে ওয়াল স্ট্রিটে পথচলা শুরু করেন তিনি। যদিও ১৫ বছর পর বরখাস্ত করা হয় তাকে।

মানবপ্রেমী ব্লুমবার্গ
পুরো বিশ্বের মানুষের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন এই মানবপ্রেমী। ১৫০টি দেশের ৭০০ শহরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন তিনি। একজন সমাজসেবক হিসেবে ২০২৩ সালেই ৩ বিলিয়ন ডলার দান করেন তিনি।

এ ছাড়া বন্দুকের নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষাসহ অন্য কারণে জীবদ্দশায় ১৭.৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি দান করেন তিনি। মৃত্যুর পর ব্লুমবার্গ এলপিতে তার অংশীদারিত্ব ‘ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস’কে দান করার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। তবে কিভাবে ব্লুমবার্গের সম্পদ সমাজসেবায় ব্যয় হবে সেই বিষয়ে তিনি বিস্তারিত এখনো জানাননি।

তথ্যসূত্র: বিবিসি ও সিএনএন

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ