Home জীবনযাপন বদলে যাবে প্রচলিত অফিস সময়!

বদলে যাবে প্রচলিত অফিস সময়!

রবিউল্লাহ
৮৮ views

সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করার দিন ফুরিয়ে আসছে। সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা বলতে শুরু করেছেন, এমন সময় আসন্ন যখন আর বাঁধাধরা সময়ে কাজের প্রয়োজন থাকবে না। একটানা কাজ করার বিষয়টি ইতিহাস হয়ে যেতে পারে।

পেশাজীবীদের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনের প্রতিষ্ঠাতা রেইড হফম্যান এমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তার ধারণা, ৯টা-৫টা কাজের মডেল ২০৩০ সালের মধ্যেই পুরো বিশ্বে অচল হয়ে যাবে।

আর ২০৩৪ সালের মধ্যে কর্মীরা নির্দিষ্ট সময় মেনে কাজ করার পরিবর্তে নিজেদের সুবিধামতো একাধিক চুক্তিতে কাজ করার পথই বেছে নেবেন।

এমন ভবিষ্যৎবাণীর পক্ষে লিংকডইনের প্রতিষ্ঠাতা একাধিক কারণ দেখিয়েছেন। তার মতে, কর্মক্ষেত্রে সময়ের পরিবর্তনের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিস্তৃতি খানিকটা দায়ী হলেও সেটা আসল কারণ নয়। কর্মক্ষেত্রের মধ্যে নানা সমস্যা এবং ক্রমবর্ধমান চাকরির নিরাপত্তাহীনতাও কাজের প্রচলিত ধারায় পরিবর্তন আনতে ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে মত তার।

দৈনিক আট ঘণ্টা বা সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজের সংস্কৃতি প্রথম চালু হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যা আজও গোটা বিশ্বে স্বীকৃত। এই নিয়ম চালু করার নেপথ্যে ছিল শ্রম, রাজনৈতিক সমঝোতা এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার দীর্ঘ জটিল সমীকরণ।

প্রতিদিন আট ঘণ্টা বা সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সময়সীমা চালু হওয়ার আগে বিশ্বজুড়ে কাজের সময় আরও বেশি ছিল। শিল্প বিপ্লবের সময় সপ্তাহে ৮০-১০০ ঘণ্টাও কাজ করতে হতো। সেই কাজের মধ্যে পরিবারের শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনাও ছিল।

১৮০০ সালের পর থেকে কর্মদিবসের দৈর্ঘ্য ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। আমেরিকা ও ইউরোপের শ্রমিক সংগঠনের ক্রমাগত লড়াইয়ের ফলে কর্মীদের কাজের পরিবেশ ও সময়ের উন্নতি ঘটে। ১৯২৬ সালে হেনরি ফোর্ডের সংস্থা ফোর্ড মোটর দিনে আট ঘণ্টা ও পাঁচদিনের কর্মসপ্তাহ চালু করে। ফোর্ড ঘোষণা করেছিলেন, আট ঘণ্টা কাজ করলে প্রত্যেক শ্রমিককে দিনে ৫ ডলার দেবেন, যা তখনকার একজন শ্রমিকের গড় পারিশ্রমিকের প্রায় দ্বিগুণ ছিল।

খুব দ্রুতই অন্যান্য সংস্থা ফোর্ডের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে শুরু করে। ‘কেলগস’ সংস্থার মালিক ডব্লিউ কে কেলগ ১৯৩০ সালে শ্রমিকদের বেতন কিছুটা কমিয়ে আট ঘণ্টার শিফটের পরিবর্তে ছয় ঘণ্টা শিফট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে অনেক তর্ক-বিতর্কের পর যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফেয়ার লেবার স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট’ চালু করা হয়। নিয়ম করা হয়— সপ্তাহে ৪৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে কর্মচারীদের অতিরিক্ত বেতন দিতে হবে।

দুই বছর পর এই আইন সংশোধন করে কর্মসপ্তাহ কমিয়ে ৪০ ঘণ্টা করা হয়। ১৯৪০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কর্মসপ্তাহ আইনে পরিণত হয়। এরপর থেকে কাগজেকলমে সারা বিশ্বে চালু হয় আট ঘণ্টা কাজের শিফট।

যদিও বাস্তব পরিস্থিতি অনেক ভিন্ন। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা চলতি বছরের একটি পরিসংখ্যান পেশ করেছে, যেখানে পৃথিবীর দেশগুলির কর্মসময় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কোন দেশে চাকুরিজীবীদের একটানা কতক্ষণ কাজ করতে হয় তার পূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয় ওই রিপোর্টে।

এতে দেখা যায়— ইংল্যান্ড, আমেরিকার কর্মচারীদের তুলনায় পৃথিবীর অনেক দেশের কর্মচারীরা নির্দিষ্ট সময়ের অনেক বেশি কাজ করছেন।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ