লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতের দক্ষিণে একটি হামলায় এই ঘটনা ঘটে। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) দাবি করেছে যে, নাসরাল্লাহকে টার্গেট করে এই হামলা চালানো হয়। ঐ হামলায় ১১ জন নিহত হয়। যার মধ্যে নাসরাল্লাহর সঙ্গে হেজবুল্লাহর সাউদার্ন ফ্রন্ট কমান্ডারও ছিলেন। হাসান নাসরাল্লাহর হত্যাকাণ্ডের পর হেজবুল্লাহ লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে, ইরান এবং তার মিত্ররা এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হেজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর হত্যার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি বলেন, এই মৃত্যু ‘প্রতিশোধহীন’ যাবে না এবং তিনি পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা করেছেন। ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি সভা আহ্বান করেছে। এবং ইরানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নাসের কানানি এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলছেন এবং প্রতিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ইতিহাসের মোড় ঘোরানো ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছেন, এবং আইডিএফ চিফ অব স্টাফ লেফট্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, “নাসরাল্লাহ পৃথিবীতে আতঙ্ক ছড়াতে পারবেনা।” দু পক্ষের এ উত্তেজনায় ঘি ঢেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তিনি এ হামলাকে ‘ন্যায়বিচারমূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

হাসান নাসরাল্লাহ ১৯৯২ সাল থেকে হেজবুল্লাহর নেতৃত্বে ছিলেন। তার মৃত্যু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কা বৃদ্ধি করেছে।
হেজবুল্লাহর প্রতিক্রিয়া: নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর হেজবুল্লাহ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের কমান্ড কাঠামো বিপর্যস্ত হলেও, এখনও হাজার হাজার যোদ্ধা রয়েছে। গোষ্ঠীটি প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র আছে।
ইরানের পদক্ষেপ: হাসান নাসরাল্লাহর হত্যাকাণ্ড ইরানের জন্যও বড় ধাক্কা। ইরান হেজবুল্লাহর সাথে যোগাযোগ রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে তারা প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করতে পারে।
ইসরায়েলের লক্ষ্য: ইসরায়েল হেজবুল্লাহর উপর আক্রমণ অব্যাহত রাখতে চায়, তবে সংগঠনটির আত্মসমর্পণের সম্ভাবনা কম। হেজবুল্লাহর প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে ইসরায়েল আরও সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।
মানবিক সঙ্কট: লেবানন থেকে ৫০,০০০ এর বেশি মানুষ সিরিয়ায় পালিয়েছে এবং অন্তত ২,০০,০০০ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সংঘাতের এই পরিণতি অঞ্চলে মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে, যা ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে।
নতুন এই পরিস্থিতি আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান উভয়কেই জড়িত হতে দেখা যেতে পারে।
তথ্য: বিবিসি, রয়টার্স