হলুদ অতি পরিচিত একটি মসলা। বেশিরভাগ বাঙালি রান্নায় এর ব্যবহার হয়ে থাকে। হলুদ গাছের আদি উৎস সাউথ এশিয়ায়। হলুদ গাছের জন্য প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতের দরকার হয়। হলুদকে সর্বরোগের মহাষৌধ বললে খুব একটা ভুল হবে না। প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ ও চৈনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে এর ব্যবহার হচ্ছে হাজার বছর ধরে। পশ্চিমাদের অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক ধরনের হলুদ শারীরিক ও মানসিক অনেক রোগ সারাতে কাজ করে। এজন্য পুষ্টিবিদেরা একে ‘সুপারফুড’-এর অ্যাখ্যা দিয়েছেন। চলুন জেনে নেয়া যাক হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে

ক্যান্সার প্রতিরোধ
হলুদে থাকা কারকিউমিন, ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। এই উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, কারকিউমিন ক্যান্সার কোষের জীবাণু ধংস করে । এনজিওজেনেসিস অর্থাৎ টিউমারে নতুন রক্তনালীগুলোর বৃদ্ধিতে বাঁধা দেয়।
মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ প্রতিরোধ
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, হলুদ আলঝেইমার, ডিমেনশিয়ার মতো মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় ভূমিকা রাখতে পারে। অক্সিডেটিভ ও প্রদাহজনিত ক্ষতি আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়া রোগ বাড়ায়। অন্যদিকে হলুদের কারকিউমিন এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাই মস্তিষ্কের সুস্থতায় সবার হলুদ খাওয়া উচিত।

মানসিক সুস্থতায়
হলুদের কারকিউমিন মানসিক সুস্থতায় বেশ ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। মস্তিষ্কের উপর এর ইতিবাচক প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারে সেরোটোনিন ও ডোপামিন হরমোন বৃদ্ধি করা, প্রদাহ হ্রাস করা। সেরোটোনিন ও ডোপামিন হরমোন আপনাকে আনন্দ, সন্তুষ্টি এবং অনুপ্রেরণার অনুভূতি দেয়। যারা হতাশা, উদ্বেগ ও স্ট্রেসে ভুগছেন তাঁদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় হলুদ রাখতে পারেন।
বাতের ব্যথা প্রশমন
বিভিন্ন ধরনের বাতের ব্যথা প্রশমনে হলুদ অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, এর কারকিউমিন ও অন্যান্য অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান অস্টিওআর্থ্রাইটিসও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ব্যথা প্রশমনে অত্যন্ত কার্যকর।

হৃদযন্ত্রের সুস্থতা
নিয়মিত হলুদ খেলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে। এটি রক্তকোষ ও কোলেস্টরেলবাহী তন্তুকে ঠিক রাখে। রক্তনালিকে উন্মুক্ত করে ও রক্ত চলাচলের বাধা দূর করে। তাই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কমে।
ডায়াবেটিস কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত সকালে উঠে কাঁচা হলুদ খেলে দেহের ভিতরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সুযোগই পায় না।
এছাড়াও হলুদে অ্যান্টি–ইনফ্লামেশন, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও কারকিউমিন উপাদান আছে, যা আমাদের শরীরের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন এমন রোগের ক্ষেত্রে। এই কারকিউমিনএকাই একশোর বেশি রোগ সারাতে পারে।

হলুদ খাবেন যেভাবে
সাধারণত মসলা হিসেবে হলুদ বেশি ব্যবহার হয়। এছাড়া চাইলে দুধ বা চায়ের সঙ্গে কাঁচা হলুদ বাটা বা এর শুকনো গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাবলি থাকার কারণে অনেক পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসক সকালে খালি পেটে এর ডিটক্স ওয়াটার গ্রহণের পরামর্শ দেন। এটি বানানোও খুব সহজ। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা-চামচ হলুদ বাঁটা বা গুঁড়ো, এক পিস লেবু ও এক চামচ মধু মেশালেই তৈরি হয়ে যাবে হলুদের ডিটক্স ওয়াটার। এই পানীয় শরীরের ব্যথা বা প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি বাড়তি মেদ ঝড়াতেও অনেক সাহায্য করবে।