নিয়মিত হেডফোন বা ইয়ারবাড ব্যবহারকারীদের জন্য সতর্ক হওয়া খুবই জরুরি। উচ্চ শব্দে দীর্ঘ সময় ধরে গান শোনা শ্রবণশক্তির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। সচেতনতা ও কিছু সহজ অভ্যাসের মাধ্যমে এই ক্ষতি পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব।
উচ্চ শব্দে শুনলে কীভাবে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
আমাদের কানের ভিতরে থাকা কোচলিয়া নামক একটি সংবেদনশীল অঙ্গের মধ্যে ছোট ছোট চুলের মতো সেল থাকে, যেগুলো শব্দ তরঙ্গকে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তর করে মস্তিষ্কে পাঠায়। উচ্চ শব্দে দীর্ঘ সময় ধরে শোনা এই সেলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা স্থায়ী শ্রবণশক্তি হ্রাসের কারণ হতে পারে।
উচ্চ শব্দের কারণে কানে বাজা (টিনিটাস), উচ্চ স্বর শুনতে সমস্যা, শব্দ মৃদু শোনা এবং কথোপকথন বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, উচ্চ শব্দে দীর্ঘ সময় ধরে শোনা কানের এই সংবেদনশীল সেলগুলোর স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, ৮০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত নিরাপদ, ছবি: ফ্রিপিক
কতটা শব্দ আমাদের কানের জন্য নিরাপদ?
শব্দের মাত্রা ডেসিবেল (dB) এককে পরিমাপ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী, ৮০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত নিরাপদ। তবে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের সর্বোচ্চ ভলিউম ১১০ ডেসিবেল পর্যন্ত হতে পারে, যা মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই কানের ক্ষতি করতে পারে।
কখন বুঝবেন হেডফোনের শব্দে আপনার কানে ক্ষতি হচ্ছে? একটি সাধারণ নিয়ম হলো, যদি আপনি কারো হেডফোনের শব্দ বাইরে থেকে শুনতে পারেন, তবে তা খুবই উচ্চ এবং ক্ষতিকর।
চলুন নিরাপদে হেডফোন বা ইয়ারবাড ব্যবহারের কিছু উপায় জেনে নেই।
ভলিউম কমিয়ে শুনুন
সর্বোচ্চ ভলিউমের ৫০-৬০% এ শুনলে আপনি নিরাপদে দীর্ঘ সময় গান শুনতে পারেন। তবে যদি ভলিউম ৮০% হয়, তবে ৯০ মিনিটের বেশি না শোনাই উচিত।
সঠিকভাবে ফিটিং ডিভাইস ব্যবহার করুন
যেসব ইয়ারবাড বা হেডফোন কানে ভালোভাবে ফিট হয় না, সেগুলো বাইরের শব্দ ঢুকতে দেয়, ফলে আপনি ভলিউম বাড়িয়ে দেন। এটি কানের জন্য ক্ষতিকর। নয়েজ-ক্যান্সেলিং ইয়ারবাড বা হেডফোন ব্যবহার করুন, যা বাইরের শব্দ কমিয়ে দেয় এবং আপনাকে কম ভলিউমে শুনতে সাহায্য করে।
মানসম্পন্ন ডিভাইস বেছে নিন
উচ্চমানের হেডফোন বা ইয়ারবাড সাধারণত ভালো সাউন্ড কোয়ালিটি প্রদান করে, ফলে আপনি ভলিউম বাড়ানোর প্রয়োজন অনুভব করবেন না।
সাউন্ড-লিমিটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করুন
বাজারে এমন অনেক ইয়ারবাড ও হেডফোন রয়েছে, যেগুলো ভলিউম একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখে। এছাড়া, কিছু অ্যাপ রয়েছে যা ভলিউম নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

রাবিং এলকোহল কটন বাড এ নিয়ে তা দিয়ে ইয়ারবাড ও হেডফোন নিয়মিত পরিষ্কার করুন, ছবি: ফ্রিপিক
কান ও ইয়ারফোন পরিষ্কার রাখুন
ইয়ারবাড বা হেডফোন ব্যবহারের আগে ও পরে কান পরিষ্কার রাখুন। তাছাড়া রাবিং এলকোহল কটন বাড এ নিয়ে তা দিয়ে ইয়ারবাড ও হেডফোন নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
শব্দের মাত্রা সম্পর্কে সচেতন থাকুন
উচ্চ শব্দের পরিবেশে থাকলে কান রক্ষা করার জন্য ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করুন।দীর্ঘ সময় ধরে হেডফোন ব্যবহার না করে মাঝে মাঝে বিরতি নিন।
যদি আপনি শ্রবণশক্তি হ্রাসের লক্ষণ অনুভব করেন, তবে একজন অডিওলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন। আপনার কানের যত্ন নিন, কারণ একবার ক্ষতি হয়ে গেলে তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। সচেতনতা ও সঠিক অভ্যাসের মাধ্যমে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে সুস্থ শ্রবণশক্তি বজায় রাখতে পারেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হেল্থলাইন