Home ফিচার পাওয়া গেল বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেশনের সরাসরি ভিজ্যুয়াল প্রমাণ

পাওয়া গেল বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেশনের সরাসরি ভিজ্যুয়াল প্রমাণ

সুপ্রভা জুঁই
৫৪ views

বিজ্ঞান জগতে এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের মাধ্যমে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (MIT) পদার্থবিদরা প্রথমবারের মতো মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানো একক পরমাণুর ছবি ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এই অভাবনীয় সাফল্য প্রকাশিত হয়েছে প্রখ্যাত জার্নাল Physical Review Letters-এ। এই গবেষণা কোয়ান্টাম জগতের বহুদিনের একটি কল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করেছে।

গবেষকরা প্রথমে একটি আলোর জালে পরমাণুগুলোকে হঠাৎ করে “ফ্রিজ” করে দেন। এরপর নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রিত লেজারের মাধ্যমে তারা পরমাণুগুলোকে আলোকিত করেন এবং সেই আলোর প্রতিফলনে তাদের অবস্থান ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এই ছবিগুলোতে একক পরমাণুদের পারস্পরিক সম্পর্ক সরাসরি দেখা যায় যা এতদিন শুধু তত্ত্বেই সীমাবদ্ধ ছিল।

এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন MIT-এর থমাস এ. ফ্র্যাংক ও পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মার্টিন জভিয়ারলাইন। তার দলের সঙ্গে ছিলেন এমআইটি-র সহকারী অধ্যাপক রিচার্ড ফ্লেচার ও কয়েকজন গবেষক। 

বোসন ও ফার্মিয়ানের আচরণ প্রত্যক্ষভাবে দেখা

গবেষকরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুই ধরনের পরমাণু, ‘বোসন’ ও ‘ফার্মিয়ন’ এর আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন। বোসনদের (যেমন: ফোটন বা সোডিয়াম অ্যাটম) বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা একে অপরের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং একক কোয়ান্টাম ওয়েভের অংশ হতে পারে। এই কারণে তারা গুচ্ছাকারে একত্রিত হয়। গবেষকরা বাস্তবে এই বোসনদের “বাঞ্চ” হতে দেখেছেন যেটা ছিল কেবল তাত্ত্বিক ভবিষ্যদ্বাণি।

অন্যদিকে, ফার্মিয়নরা সাধারণত পরস্পরকে প্রতিহত করে। কিন্তু ভিন্নধর্মী ফার্মিয়নের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ তৈরি হতে পারে যেটাই সুপারকন্ডাক্টিভিটির মূল ভিত্তি। MIT দলের তোলা ছবিতে দেখা যায়, ফার্মিয়নরা জোড়া তৈরি করছে। এই দৃশ্য আগে কোনোদিন সরাসরি দেখা যায়নি।

c copy 1

প্রথমবারের মতো মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানো একক পরমাণুর ছবি ধারণ করা গেল

সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও ‘বোসোন কণা’

সত্যেন্দ্র নাথ বসু ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন প্রখ্যাত ভারতীয় তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী, যিনি কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে অনন্য অবদান রেখেছেন। বসু ১৯২৪ সালে আলোর কণা, অর্থাৎ ফোটনের আচরণ নিয়ে একটি মৌলিক গবেষণাপত্র লেখেন। এই গবেষণাপত্র তিনি আলবার্ট আইনস্টাইনের কাছে পাঠান, যিনি তাঁর কাজকে সমর্থন করে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেন এবং নিজের তত্ত্বের সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে নতুন এক গাণিতিক কাঠামো গড়ে তোলেন, যেটি পরে “বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান” নামে পরিচিতি পায়। এই তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত হয় নতুন ধরনের কণা যার নাম ‘বোসন’। এর নামকরণ করা হয় বসুর নামানুসারে। সত্যেন্দ্র নাথ বসুর এই অবদান কোয়ান্টাম বলবিদ্যা, পরমাণুবিজ্ঞান, এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অনেক শাখার ভিত্তি গড়ে দেয়। বিশেষত বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট ও হিগস বোসনের মতো আবিষ্কারে তাঁর তত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ