Home বাংলাদেশ ট্রাম্প-মোদি বৈঠকে গুরুত্ব পাবে বাংলাদেশ ইস্যু

ট্রাম্প-মোদি বৈঠকে গুরুত্ব পাবে বাংলাদেশ ইস্যু

হ্যালো বাংলাদেশ ডেস্ক
৯৪ views

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন আজ (১২ ফেব্রুয়ারি)। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটাই মোদির প্রথম মার্কিন সফর। তার এই সফরে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে। দুই নেতার আলোচনায় আরও গুরুত্ব পেতে পারে বাণিজ্য মাসুল কম করা, আমেরিকা থেকে ভারতের তেল ও প্রতিরক্ষা সামগ্রী কেনা, বেআইনি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো, চীন ও পাকিস্তান প্রসঙ্গ।

বিমানে উঠার আগে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘বন্ধু ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার জন্য মুখিয়ে আছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তখন আমরা একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। এই সফরে প্রযুক্তি, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, বিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করব। দুই দেশের মানুষ যাতে উপকৃত হন, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করব।’

বাংলাদেশ নিয়ে কী আলোচনা হতে পারে?
মোদি-ট্রাম্প আলোচনায় নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আসবে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। ওপি জিন্দল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদির এই সফরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব থাকবে বাণিজ্যের ওপরে। তবে বাংলাদেশ-সহ দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে আলোচনা হবে বলেই মনে হয়। তবে এখনই ট্রাম্প বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে কড়া লাইন নেবেন, পুরোপুরি ভারতকে সমর্থন করবেন, তা মনে হচ্ছে না।’

ফের কূটনৈতিক উত্তেজনা ঢাকা-দিল্লির
শ্রীরাধার মতে, ‘বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্পের মাথাব্যথা কম। তার অনেক বেশি মাথাব্যথা রাশিয়া ও চীনকে নিয়ে। কিন্তু তিনি কাঁচা খেলোয়াড়ও নন। আর বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রাম্পের বাণিজ্যিক স্বার্থ আছে। বাংলাদেশ থেকে যে দামে পোশাক আমেরিকায় যায়, সেটা অন্য কোনো দেশ দিতে পারবে না। আর আমেরিকা নিজের স্বার্থই দেখবে বলে আমার মনে হয়। তবে সাধারণভাবে তিনি ভারতের পাশে থাকবেন।’

ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক ও কূটনীতি বিশেষজ্ঞ প্রণয় শর্মা জানান, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা স্বাভাবিক। বাংলাদেশের এখনকার অবস্থা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

প্রণয় জানান, প্রথমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ট্রাম্প দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়ে মোদির পরামর্শকে গুরুত্ব দিতেন। ভারতের কথামতো চলার চেষ্টা করতেন। এখানেই ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে তার একটা পার্থক্য আছে। ডেমোক্র্যাটরা মাইক্রো ম্যানেজ করতে ভালোবাসে। তারা তাদের নীতি নিয়ে চলতে ভালোবাসে। ভারতের সেখানে সুবিধা হচ্ছে কি না, তা তারা দেখে না। কিন্তু ট্রাম্প অনেক বেশি করে ভারতের বিষয়টি মাথায় রাখেন।

এ ছাড়া নিজ দেশের নানা বিষয় নিয়েও ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, ভিসা, অভিভাসী এবং অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় ইস্যু।

বাণিজ্য মাসুল কমানো
ট্রাম্পের দাবি মেনে নিয়ে ভারত বাণিজ্য মাসুল আরো কমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে নামতে চাইছে না। ভারত ইলেকট্রনিক্স, চিকিৎসা সামগ্রী, রাসায়নিক, বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কম করতে পারে।ট্রাম্পের আর্থিক পরামর্শদাতা কেভিন হ্যাসেট বলেছেন, ভারত বাণিজ্য মাসুল অনেকটাই বাড়িয়ে রেখেছে। যখন মোদী ও ট্রাম্প কথা বলবেন, তখন তারা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারে কথা বলবেন। ভারত একাধিক জিনিসের উপর বাণিজ্য মাসুল কমাতে পারে। কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়ন সেস তুলে দেয়া নিয়েও ভারতের উপর চাপ আছে।

প্রতিরক্ষা
ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফ৩৫ যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করতে চায়। তারা যুদ্ধে প্রয়োজনীয় গাড়ি কিনতে ও তা দেশে বানাতে আগ্রহী। এছাড়া কিছু অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম কিনতে চায় ভারত। দ্য টেলিগ্রাফের সাবেক বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরী বলেছেন, ”আমেরিকা নিশ্চিতভাবেই ভারতে প্রতিরক্ষাসামগ্রী বিক্রি করতে আগ্রহী। ট্রাম্পও সেটাই চান। তবে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকেও প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র কেনে। এই বিষয়টিও আমেরিকা তুলতে পারে।”

ভিসা
এইচওয়ানবি ভিসা যাতে আগের মতো চালু থাকে, সেই বিষয়টি ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, হাজার হাজার ভারতীয় পেশাদার এই ভিসা নিয়ে অ্যামেরিকায় কাজ করতে যান। ট্রাম্প এই ভিসা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আইনি পথে মানুষ অ্যামেরিকায় এসে কাজ করলে তার আপত্তি নেই। তবে মোদি-ট্রাম্প বৈঠকে এই ভিসা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

বেআইনি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো
কিছুদিন আগেই অ্যামেরিকা থেকে ১০৪জন বেআইনি অভিবাসীকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাদের পাঠানো হয়েছে সামরিক বিমানে এবং পুরুষদের হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরিয়ে। এরপর বিরোধী নেতারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, এই বিষয়ে অ্যামেরিকার আগে থেকে নেয়া নির্দিষ্ট নীতি আছে। তারা তা অনুসরণ করছে। প্রণয় শর্মা জানিয়েছেন, ”ভারত ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা বেআইনি অভিবাসীদের গ্রহণ করবে। তবে যেভাবে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাতে মানবিকতা লংঘিত হয়েছে। তারা কেউ অপরাধী নন। তাদের এইভাবে অপমান করাটা মেনে নেয়া যায় না। অ্যামেরিকার নিয়ম থাকতেই পারে। কিন্তু মানবিক মর্যাদার একটা বিষয়ও আছে।”

সূত্র: ডয়চে ভেলে, রয়টার্স ও ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ