বাংলাদেশে যদি ‘ সবচেয়ে অপছন্দের সবজি’ নিয়ে জরিপ করা হয় তাহলে প্রথম পাঁচের মধ্যে থাকবে করলার নাম। আবার অনেকেই আছেন যারা খুব আয়েশ করে করলা ভাজি দিয়ে দুপুর বেলার লাঞ্চ শুরু করেন। পছন্দ-অপছন্দ যেমনই হোক না কেন, করলা যে পুষ্টিগুণে ঠাসা একটি সবজি তা মানতেই হবে। গরমের সময় আমাদের দেশে এই সবজির ব্যাপক ফলন হয়। বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও এশিয়ার অনেক দেশ যেমন, চীন, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এই সবজিটিকে বেশ সমাদর করা হয়। জাপানের বিখ্যাত ওকিনাওয়া দ্বীপ, যেখানে মানুষের গড় আয়ু ৮০ থেকে ৮৭ বছরের বেশি, সেখানে করলা স্বাস্থ্যকর সবজি হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
পুষ্টিবিজ্ঞানীরা তিতা করলাকে সুপারফুডের খেতাব দিয়েছেন। কারণ এটি হলো এক শক্তিশালী পুষ্টি ভাণ্ডার। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, বি১, বি২, বি৩ ও বি৯। পাশাপাশি এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কম ক্যালোরি আর কম ফ্যাটের কারণে যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য করলা একটি আদর্শ খাবার। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক এই সবজির স্বাস্থ্যগুণ-

বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও এশিয়ার অনেক দেশেই করলার বেশ জনপ্রিয়তা আছে, ছবি: ফ্রিপিক
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করলা
করলা প্রাকৃতিকভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এতে উপস্থিত চ্যারান্টিন ও অ্যালকালোয়িডস- নামক দুইটি উপাদান ইনসুলিনের কার্যকারিতাকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত করলা খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সহায়ক হতে পারে।
ইমিউন সিস্টেম মজবুত করে
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ করলা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং শরীরকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।

অনেকে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে করলার জুস পান করেন, ছবি: ফ্রিপিক
ত্বক ও চুলের যত্নে
করলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ত্বকের সংক্রমণ রোধ করে। ব্রণ বা চুলকানির সমস্যায় করলার রস ভেতর ও বাইরে উভয়ভাবেই উপকারী। পাশাপাশি চুলের গোড়া শক্ত করে ও খুশকি দূর করতে করলা দারুণ কাজ করে।
পাচনতন্ত্রের উন্নতি ঘটায়
করলার ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। নিয়মিত করলা খেলে অন্ত্র পরিষ্কার থাকে ও খাবারের সঠিক শোষণ হয়।
ক্যানসার প্রতিরোধের সম্ভাবনা
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, করলার নির্যাস ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিকে ধীর করে দিতে পারে, বিশেষ করে ব্রেস্ট ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ক্ষেত্রে। যদিও এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, তবে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে।