৯/১১-র হামলা থেকে শুরু করে প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যু, চেরনোবিল বিপর্যয় থেকে ব্রেক্সিট, কত কিছু সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। সেসব অক্ষরে-অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তিনি হলেন ‘বুলগেরিয়ার নসট্রাদামুস’ ওরফে বাবা ভাঙ্গা।
১৯১১ সালের ৩১ জানুয়ারি উসমানীয় সাম্রাজ্যের (বর্তমান ম্যাসেডোনিয়া প্রজাতন্ত্র) স্ট্রোমিকাতে জন্মগ্রহণ করেন ভ্যানগেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা। যিনি পরে বাবা ভাঙ্গা নামে বিশ্ববন্দিত হন। বুলগেরিয়ার রহস্যময় ও আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন এক অন্ধ নারী বাবা ভাঙ্গা। যিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন বুলগেরিয়ার কুজহু পার্বত্য অঞ্চলের রুপিটি নামক স্থানে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাস যে, ‘বল্কানদের নসট্রাদামুস’ অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারীই ছিলেন।
শৈশবে ভ্যানগেলিয়া নীল চোখ ও সোনালি চুলের এক সাধারণ মেয়েই ছিলেন। তার বাবা অভ্যন্তরীণ ম্যাসেডোনীয় বিপ্লবী সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বুলগেরীয় সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলকভাবে যোগদান করেছিলেন। শৈশবেই ভ্যানগেলিয়ার মা মৃত্যুবরণ করায় তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পরে ভ্যানগেলিয়াকে তার সৎ মা লালন পালন করেন। যদিও ভ্যানগেলিয়া অধিকাংশ সময় প্রতিবেশীদের সঙ্গেই কাটাতেন।
শোনা যায়, এক ভয়ংকর ঝড় বাবা ভাঙ্গাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল। ব্যাপক খোঁজাখুঁজির পর তাকে কর্দমাক্ত অবস্থায় অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল এক মাঠ থেকে। বাবা ভাঙ্গার চোখ ছিল বালু ভর্তি। অনেক চেষ্টার পরও তিনি চোখ খুলতে পারছিলেন না এবং চোখের অস্ত্রোপচারের টাকাও ছিল না। এরপর বাবা ভাঙ্গা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যান। যদিও এই দাবির স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ নেই।
১৯২৫ সালে বাবা ভাঙ্গাকে জেমুন শহরের এক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেন। শুধু তাই নয়, সেখানেই তিনি পিয়ানো বাজানো, বুনন, এবং রান্নাবান্নাও শেখেন।
এই বিদ্যালয়ে বাবা ভাঙ্গা প্রায় তিন বছর ছিলেন। এরপর তার সৎমায়ের মৃত্যু হলে সৎভাইদের দেখাশোনার জন্য বাড়িতে ফিরে যান। পরিবার হতদরিদ্র হওয়ায় অন্ধত্ব নিয়েও কাজ করতে হয়ছিল বাবা ভাঙ্গাকে।
১৯৪২ সালের ১৯ মে বাবা ভাঙ্গা দিমিতার গোসতারভ নামে এক সৈনিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দিমিতার ছিলেন পেটরিচের নিকটবর্তী ক্রেন্দাহিলিৎসা গ্রামের বাসিন্দা। যিনি তার ভাইয়ের হত্যাকারীদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করতেই ভাঙ্গার কাছে নিয়মিত আসতেন। সেখান থেকেই আলাপচারিতার পর বিয়ে করেন তারা।
বিয়ের পরপরই তারা পেটরিচ চলে যান এবং সেখানেই বাবা ভাঙ্গার খ্যাতি আরও বৃদ্ধি পায়। কিছুদিন পর দিমিতা বাধ্যতামূলকভাবে বুলগেরীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। দিমিতার ১৯৪৭ সালে অতিরিক্ত মদ্য়পানের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৯৬২ সালের ১ এপ্রিল মারা যান।