Home প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলা ডিপসিক নিয়ে চিন্তার ভাঁজ!

বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলা ডিপসিক নিয়ে চিন্তার ভাঁজ!

মোহাম্মদ রবিউল্লাহ
১২৪ views

ইলেকট্রনিক গ্যাজেট থেকে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি, সবখানে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের পর ড্রাগনের দেশ চীনের নজর এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকে। দেশটির একটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ডিপসিক গত সপ্তাহে উদ্বোধন করেছে আরওয়ান (R1) নামের একটি মডেল।

চীনা হেজ ফান্ড সংস্থা হাই ফ্লায়ারের মালিকানাধীন এই প্ল্যাটফর্মটির কারণে ধাক্কা খেয়েছে সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি জায়ান্টরা। ক্যালির্ফোনিয়া ছাড়াও কয়েকদিন ধরে মার্কিন মসনদ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পুরো বিশ্বের নজর নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে এই ডিপসিক।

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে প্রতিযোগিতা বাড়ার মধ্যেই চীনা প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের তৈরি ‘ডিপসিক এআই’ মডেল সম্প্রতি উন্মুক্তের সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে বাজারে। চীনা এই সংস্থার দাবি, তারা আমেরিকার সংস্থাগুলোর তুলনায় অনেক স্বল্পমূল্যে একটি বৃহৎ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল তৈরি করেছে।

ডিপসিক চ্যাটজিপিটি

ডিপসিকের আরওয়ান চ্যাট জিপিটির মতো একই লেভেলের পারফর্ম করছে , ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

এরপরই ডিপসিকের অ্যাপ খুবই দ্রুত অ্যাপেলের অ্যাপস্টোরের ডাউনলোড হওয়া অ্যাপের তালিকায় উপরের দিকে চলে আসে। আমেরিকার একাধিক ক্ষেত্রে চীনা আগ্রাসনের ওপর তৈরি হওয়া নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অতি সম্প্রতি এই ঘটনা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছে বাজার বিশেষজ্ঞরা।

ডিপসিক আলাদা কেন?

এতো কম সময়ে এই মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলার পরও ডিপসিকের এআই মডেল বাণিজ্যিকীকরণ করার কোনও পরিকল্পনা নেই। তারা শুধুই রিসার্চে ফোকাস করতে চায়। অন্যদিকে, ডিপসিক তাদের খরচের জন্য বাইদু, আলিবাবা বা বাইটড্যান্সের মতো বড় বড় টেক জায়ান্টের উপর নির্ভর করে না। বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু করা ডিপসিকের পেছনে শুধুমাত্র রয়েছে চীনের হেজফান্ড সংস্থা হাই ফ্লায়ার।

মার্কিন বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের এক রিপোর্ট বলেছে, ডিপসিকের সঙ্গে চিপ প্রস্তুতকারক সংস্থা এএমডি (AMD)’র একটি চুক্তি রয়েছে। সেই কারণেই এএমডি’র জিপিইউ (GPU) ও আরওসিএম (ROCM) সফটওয়্যার ব্যবহার করে তাদের আরেক এআই মডেল ডিপসিক ভি-৩(V3) তে।

deep seek

ডিপসিকের প্রতিষ্ঠা হয় মাত্র ২ বছর আগে, ছবি: ডম’স গাইড ডটকম

প্রযুক্তি জগতে কেন ঝড় তুলল ডিপসিক?

সিলিকন ভ্যালি ও মার্কিন সরকারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি, তার অস্তিত্বগত প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ডিপসিকের এই এআই মডেলের উত্থান ও সফলতা। আমেরিকার বড় বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলো মনে করে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে তারা অনেকাংশে এগিয়ে রয়েছে। বিশাল মূলধনের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রথম সারির মেধাবীদের তুলে আনতে পারে কিংবা বড় ডেটা সেন্টার তৈরির জন্য বিপুল বিনিয়োগ করে অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও হাই-এন্ড চিপ কেনার ক্ষমতাও রাখে তারা।

এই প্রসঙ্গে মার্কেট গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য কোবেইসি লেটারের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডাম কোবেইসি সোশ্যাল প্লাটফর্ম এক্সে লিখেছেন, ‘১০ বছর আগে ওপেন এআই প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে তাদের কর্মী সংখ্যা ৪ হাজার ৫০০ এবং তারা বাজার থেকে মোট ৬.৬ বিলিয়ন ডলার তুলেছে মূলধন হিসাবে।

অন্যদিকে, ডিপসিকের প্রতিষ্ঠা হয় মাত্র ২ বছর আগে। মাত্র ২০০ কর্মী সেখানে কাজ করেন ও বাজার থেকে তারা এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার তুলেছে মূলধন হিসাবে। এতদিন মনে করা হত এআই সংক্রান্ত রিসার্চ বা এমন একটা সংস্থা চালাতে কোটি কোটি টাকা লাগে। আর এই ধারণায় সমূলে আঘাত করেছে ডিপসিক বলে যোগ করেন তিনি।

টেক অ্যানালিস্টরা বলছেন, ডিপসিকের আরওয়ান চ্যাট জিপিটির মতো একই লেভেলের পারফর্ম করছে। এআই যুদ্ধে কী শেষ হাসি চীনই হাসবে? এমন প্রশ্ন করছেন কেউ কেউ। তবে এখনই এর উত্তর দেওয়া কঠিন। কারণ প্রশংসার পাশাপাশি চীনা ডিপসিকের নিন্দাও সমান তালে চলছে।

Deepseek 1

ডিপসিকের কারণে ধাক্কা খেয়েছে সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি জায়ান্টরা, ছবি: টম’স গাইড ডটকম

ওপেন এআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান এক প্রতিক্রিয়ায় ডিপসিককে ‘ইম্প্রেসিভ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ডিপসিককে ‘প্রতিযোগী’সংস্থা ঘোষণা করে আশা করেছেন ভবিষ্যতে আরও ভাল মডেল তৈরি করবে তার সংস্থা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার ব্যবহারের সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে, এআই বিশেষজ্ঞদের একটি যুগান্তকারী প্রতিবেদন অনুসারে, গবেষণার প্রধান লেখক সতর্ক করে দিয়েছেন যে ডিপসিক এবং অন্যান্য বিঘ্নকারী উপাদান নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

আধুনিক এআই-এর অন্যতম গডফাদার হিসেবে বিবেচিত ইশুয়া বেনজিও বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা স্টার্টআপ ডিপসিক এর অগ্রগতি একটি উদ্বেগজনক উন্নয়ন হতে পারে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য ডিপসিক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই অ্যাপ সম্পর্কে সবধরনের তথ্য জানার পাশাপশি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ তা খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিদের্শ  দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: জিও নিউজ ও দ্য গার্ডিয়ান

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ