Home লাইফস্টাইল যুদ্ধের ভয়াবহতা: দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যে

যুদ্ধের ভয়াবহতা: দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যে

ফাহমিদা শিকদার
৫৪ views

সম্প্রতি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানে সামরিক সংঘাত শুরু হয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না এলেও বোঝা যাচ্ছে যুদ্ধ বাঁধতে দেরি নেই। এ নিয়ে গত দুইদিন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, নিউজ চ্যানেল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ উত্তেজনা চলছে। বাংলাদেশের কেউ কেউ বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধের কারণে পাকিস্তানকে সমর্থন জানাচ্ছেন। তবে অনেকেই দুই দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে যুদ্ধের বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছেন, শেয়ার করছেন যুদ্ধবিরোধী পোস্ট। বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটি হয়ে উঠেছে যুদ্ধ বনাম মানসিকতা লড়াই। কিছুদিন আগেও ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে অনেকে রাস্তায় নেমেছিলেন। এখন এই দুই দেশের সংঘাতে অনেকে উল্লাস করছেন। অথচ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারছেন না এ ঘটনা আমাদের মনে কি প্রভাব ফেলে যাচ্ছে।

যুদ্ধ — শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধ্বংসস্তূপ, কান্না, রক্ত, এবং শূন্যতা। কিন্তু এর ক্ষতি শুধু গোলাগুলি, মৃত্যু বা শহরের ধ্বংসেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তার ছায়া দীর্ঘস্থায়ী এবং অনেক সময় অদৃশ্য — মানুষের মনোজগতে তা রেখে যায় গভীর ক্ষতচিহ্ন। এই ক্ষত শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা মানুষদের নয়, বরং ছড়িয়ে পড়ে সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরেও।

052620 EndWar 01

যুদ্ধের ক্ষত শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা মানুষদের নয়, বরং ছড়িয়ে পড়ে সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরেও, ছবি: মুলওয়াকে ইন্ডিপেনডেন্ট

দূরত্ব মানেই নিরাপত্তা নয়
অনেকেই মনে করেন যুদ্ধ কেবলমাত্র যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলেই প্রভাব ফেলে। বাস্তবতা হলো, মিডিয়ার সহজলভ্যতা ও বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা প্রত্যেকে যুদ্ধের দর্শক। টেলিভিশনের পর্দা, সোশ্যাল মিডিয়া বা সংবাদপত্রে যুদ্ধের দৃশ্য — বিধ্বস্ত শিশুর কান্না, বোমার শব্দে কেঁপে ওঠা মাটি, অথবা উদ্বাস্তু শিবিরে খাবারের জন্য হাহাকার — আমাদের মনোজগতে প্রবেশ করে গভীরভাবে। এসব দৃশ্য আমাদের অজান্তেই উদ্বেগ, দুঃস্বপ্ন, অথবা মনঃক্ষয় ডেকে আনে।

সহানুভূতির ভার: ভিন্ন দেশেও মানসিক চাপ
শুধু যুদ্ধক্ষেত্রের মানুষরাই নয়, সহানুভূতির ভিত্তিতে যুদ্ধ-আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে অনেক সময় ভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষরাও আবেগগত চাপের শিকার হন। যাঁরা নিয়মিত মানবিক সহায়তায় যুক্ত, তাঁরা যুদ্ধের চিত্র দেখে ‘secondary trauma’-তে আক্রান্ত হতে পারেন — যা এক ধরনের মানসিক চাপ, যেখানে কেউ নিজে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও অন্যের দুঃখ অনুভব করে মানসিক ভার বহন করেন।

Conflict and Psychological Conse

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যুদ্ধের দৃশ্য আমাদের অজান্তেই উদ্বেগ, দুঃস্বপ্ন, অথবা মনঃক্ষয় ডেকে আনে, ছবি: মেন্টাল হেলথ এন্ড মোটিভেশন

শিশু ও কিশোরদের ওপর প্রভাব
বিশেষত যুদ্ধের ছবি, ভিডিও বা সংবাদ শিশু-কিশোরদের মস্তিষ্কে তীব্র প্রভাব ফেলে। তারা রাতের ঘুম হারায়, স্কুলে মনোযোগ হারায়, এমনকি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় পেতে থাকে। এই বয়সে মানসিক ভারসাম্য হারালে তা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক জটিলতায় রূপ নিতে পারে।

করণীয়: মানসিক স্বাস্থ্যের সচেতনতা

এই পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় হলো —

  • যুদ্ধসংক্রান্ত মিডিয়া কনটেন্ট শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা।
  • উদ্বাস্তু এবং যুদ্ধ-আক্রান্তদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা নিশ্চিত করা।
  • সাধারণ মানুষের মানসিক প্রশান্তির জন্য কাউন্সেলিং, হেল্পলাইন এবং সচেতনতা কর্মসূচির আয়োজন করা।

যুদ্ধ যখন থেমে যায়, তখনো তার ভয়াবহতা থেকে যায় বহু মানুষের মনে — অনেক সময় তা নিঃশব্দে। সীমান্ত পেরিয়ে এই মানসিক ঢেউ আছড়ে পড়ে বিশ্ববাসীর মনে। তাই যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো শুধু রাজনৈতিক নয়, মানবিক দায়িত্বও বটে — কারণ মানুষের মনই হলো সব কিছুর কেন্দ্র।

 

 

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ