বর্তমানের ব্যস্ত জীবনযাত্রা, কাজের চাপ এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েনে মানুষ দিন দিন মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ছে। অবসাদ, উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের অভাব—এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম কার্যকর উপায় হল নিয়মিত শরীরচর্চা। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।
কয়েক বছর আগে ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক সমস্যা ও চাপ থেকে দূরে থাকতে একজন মানুষকে ওষুধ বা কাউন্সেলিংয়ের চেয়েও বেশি সাহায্য করে শরীরচর্চা। প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে করা এই পরীক্ষায় কিছু মানুষকে সাধারণ জীবনযাপন করতে বলা হয়, এবং বাকিদের সপ্তাহে মোট ১৫০ মিনিট নানারকম ব্যায়াম, যেমন- হাঁটাহাঁটি, ভারোত্তোলন, যোগব্যায়াম ইত্যাদি করতে দেওয়া হয়। হতাশা, উদ্বিগ্নতা, মানসিক চাপের জন্য ওষুধের চেয়ে তুলনামূলক বেশি কার্যকর হিসেবে দেখা যায় এক্ষেত্রে শরীরচর্চাকে।
মানসিক চাপ কমায়
শরীরচর্চার সময় আমাদের মস্তিষ্ক এন্ডোরফিন নামক একটি হরমোন নিঃসরণ করে। ডোপামিনের মতো একেও “হ্যাপি হরমোন” বলা হয়, কারণ এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং মেজাজ উন্নত করতে সাহায্য করে। যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন-নির্ভর শরীরচর্চা বিশেষভাবে মানসিক চাপ দূর করতে কার্যকর।
ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ হ্রাস
ডিপ্রেশন ও উদ্বেগে ভোগা মানুষের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের অভাব দেখা যায়। নিয়মিত ব্যায়াম এই হরমোন নিঃসরণের গতি বাড়িয়ে মানসিক অবস্থা উন্নত করে। এমনকি, হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে ব্যায়াম প্রায় অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ওষুধের মতোই কার্যকর হতে পারে।

দলগত খেলাধুলা বা গ্রুপ এক্সারসাইজে অংশ নিলে একাকীত্ব দূর হয়।
আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
শরীরচর্চা শুধুমাত্র শারীরিক গঠন উন্নত করে না, এটি একজন মানুষের নিজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়, ওজন কমে এবং সামগ্রিক শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এই পরিবর্তনগুলি একজন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
ঘুমের মান উন্নত করে
যাঁরা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের অনেক সময় ঘুমের সমস্যাও দেখা যায়। নিয়মিত শরীরচর্চা ঘুমের গুণগত মান উন্নত করে, কারণ এটি শরীরের জৈবিক ঘড়িকে সঠিক ছন্দে নিয়ে আসে। বিশেষ করে, অ্যারোবিক ব্যায়াম বা হালকা জগিং ঘুমের সমস্যা দূর করতে দারুণ কার্যকর।
সামাজিক সংযোগ বাড়ায়
শরীরচর্চা অনেক সময় সামাজিক সংযোগ বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়। দলগত খেলাধুলা বা গ্রুপ এক্সারসাইজে অংশ নেওয়া মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের একটি ভালো উপায়। এই ধরনের কার্যক্রম মানসিক একাকীত্ব দূর করে এবং মানুষকে সুখী করে তোলে।