মরণব্যধি ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালেই বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস। এরই অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও সামোয়া সফর করেন তিনি। আগামী বছরও অনেক দেশ সফরের কথা রয়েছে তার।
ব্রিটিশ রাজা গত ১৮ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় তার নির্ধারিত সফর শুরু করেন। তবে ক্যান্সার আক্রান্ত ৭৫ বছর বয়সী রাজা সফরের ওইদিনসহ ১৯ অক্টোবর বিশ্রামে থাকেন। তার স্বাস্থ্য অবস্থার কথা বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নিয়ম অনুসারে, অস্ট্রেলিয়াসহ সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ বা কমনওয়েলথভুক্ত আরও ১৪টি দেশের রাজা হলেন চার্লস। অস্ট্রেলিয়া ও সামোয়ায় চার্লসের সফরের মেয়াদ ৯ দিন। গত বছরের মে মাসে রাজা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে মুকুট পরার পর এটি চার্লসের প্রথম কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর।
ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালেও রাজার বিদেশ সফরের বিষয়টি জানিয়ে বাকিংহাম প্যালেস বলেছে, বিশ্ব ভ্রমণের অংশ হিসেবে ৯ দিনের জন্য অস্ট্রেলিয়া ও সামোয়া সফর করছেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানী ক্যামেলিয়া।
আগামী বছর পুরোদমে রাজা ও রানীর বিশ্ব ভ্রমণের জন্য বাকিংহাম প্যালেস কাজ করছে। তবে রাজা কোথায় যাবেন বা যাবেন না, তার চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত প্রাসাদ কর্মকর্তারা জানাতে পারছেন না। কারণ সফরের আগে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করেই সফরসূচি ঠিক করতে হচ্ছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ক্যান্সার ধরা পড়ে রাজার। ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালে এর আগে ৯ দিনের মতো দীর্ঘ বিদেশ সফরে রাজা যাননি। অস্ট্রেলিয়া ও সামোয়া সফরের সঙ্গেই নিউজিল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশে যাওয়ার কথা ছিল রাজা চার্লসের। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে নিউজিল্যান্ড সফর বাতিল করা হয় বলে জানায় বাকিংহাম প্যালেস।
অস্ট্রেলিয়া পৌঁছানোর পর গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আদিবাসী প্রতিনিধিরাও রাজাকে স্বাগত জানান। পরে ক্যানবেরার পার্লামেন্ট হাউসের গ্রেট হলেও তাকে দেশটির আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী সুর বাজিয়ে স্বাগত জানানো হয়।

সামোয়ায় অপিয়া কালচারাল ভিলেজ পরিদর্শনের সময় একটি ক্রিকেট দলের সদস্যদের সাথে রাজা চার্লস ও রাণী ক্যামেলিয়া, ছবি: স্কাই নিউজ
আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রীতি ও প্রাকৃতিক জ্ঞানের প্রশংসা করেন রাজা। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান আমার ধারণা ও শিক্ষাকে আরও শক্তিশালী হতে সাহায্য করেছে।
পার্লামেন্ট হাউসের ওই ভাষণে তিনি আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় আমার আগের সফরগুলোতে আমি সেই সাহস ও আশা প্রত্যক্ষ করেছি, যা মাঝে মধ্যে জাতির দীর্ঘ ও কঠিন সময়েও সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে।
সামোয়াতে কমনওয়েলথ সম্মেলনে চার্লস
রাজা হিসেবে প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে সামোয়াতে যান রাজা তৃতীয় চার্লস ও তার স্ত্রী ক্যামিলিয়া। ২৩ অক্টোবর চার্লস দম্পতি সামোয়া পৌঁছান। স্থানীয় কালচারাল ভিলেজও পরিদর্শন করেন রাজা-রাণী। এ সময় একটি ক্রিকেট দলের সদস্যদের সাথে রাজা ও রাণী মিশে একাকার হয়ে যান।
৫৬টি দেশ নিয়ে গঠিত কমনওয়েলথের দ্বি-বার্ষিক এই সভায় প্রায় ৩ হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এই প্রথম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের কোনো দেশ এই সম্মেলন আয়োজন করছে এবং এই অঞ্চলকে তুলে ধরার সুযোগ থাকবে তাদের কাছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শেষ প্রতিনিধি হিসেবে রাজা এই গোষ্ঠীতে প্রাণের নতুন পরশ নিয়ে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া ও সামোয়া সফরে গিয়ে বেশ উৎফুল্ল রাজা। পাশে থেকে রাজাকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন রানী ক্যামেলিয়া। তিনি রাজাকে সব সময় সাহস যুগিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া ও সামোয়া সফর রাজার জন্য টনিক হিসেবে কাজ করেছে। সেখানকার মানুষজনের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা পেয়ে রাজার মনের অবস্থা খুবই ভালো।
পার্লামেন্টে ‘হেনস্থা’র শিকার
এত আনন্দ ও ফূর্তির মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে গিয়ে ‘হেনস্তার শিকার’ হতে হয় ব্রিটিশ রাজা চার্লসকে। রাজা পার্লামেন্ট কক্ষে পৌঁছনোর পর তাকে উদ্দেশ্য করে উপনিবেশ-বিরোধী স্লোগান দেন অস্ট্রেলিয়ার আইন প্রণেতা লিডিয়া থর্প। তিনি রাজাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এটা আমাদের জমি, যা আপনারা আমাদের কাছ থেকে চুরি করেছেন। আমাদের জমি ফিরিয়ে দিন। ২১ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে এ ঘটনা।

ঘটনার পর আদিবাসী সেনেটর লিডিয়া থর্পকে পার্লামেন্টের বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা, ছবি: স্কাই নিউজ
লিডিয়া থর্প অস্ট্রেলিয়ারই ভূমিকন্যা। কঠোর রাজতন্ত্র-বিরোধী অবস্থানের জন্য তিনি পরিচিত। এর আগেও উপনিবেশ বিরোধী অবস্থানের জন্য প্রচারের আলোয় এসেছেন তিনি।
১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়া ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিল। ১৯০১ সালে অস্ট্রেলিয়া স্বাধীন হয়। যদিও খাতা-কলমে কমনওয়েলথের সদস্য অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ব্রিটেনের রাজা। ঔপনিবেশিক আমলে বহু স্থানীয় অস্ট্রেলিয়কে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে। অনেককে বাস্তুচ্যুতও হতে হয়।
তথ্যসূত্র: স্কাই নিউজ, বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা