আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় আবার ফিরল কমেডি বা কৌতুক। সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ও তার শাসনকালে দেশটির কৌতুক অভিনেতারা নানানভাবে নির্যাতনের শিকার হন। বিদ্রোহের পর পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে দেশটির বিভিন্ন স্থানে আবারো পরিবেশনা শুরু করেছেন কৌতুক অভিনেতারা।
সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থা, ডলার, নির্বাচন এমনকি প্রেসিডেন্টের নাম নিয়ে মজার ছলে কোনো ধরনের কথা বলা যেতো না। তাকে নিয়ে মজা করলেই গ্রেফতার কিংবা তার চেয়ে খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হতো। তারা এখন নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন। তারা আসাদের ভয়ে আর আতঙ্কিত নয়। এখন ভয়-ভীতির উর্ধ্বে থেকেই তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারছেন বলে দাবি করছেন।
আসাদ সরকারের পতনের পর ১৩ জন কমেডিয়ান ২ ঘন্টার বেশি সময় রাজধানী দামেস্কের খোলা রাস্তায় কৌতুক পরিবেশন করেন। এর মধ্যে রামি জাবের ও মেরি ওবায়েদ নামের দুজন নারী কমেডিয়ানও ছিলেন। ‘সিরিয়া এন্ড হাইসটেরিয়া’ নামের ওই শোতে নিজের ব্যক্তিগত দুর্দশার কাহিনী সবার সাথে শেয়ার করেন তারা।

দামেস্কে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কথা বলছেন নারী কমেডিয়ান রামি জাবের, ছবি: দ্য জাকার্তা পোস্ট
দামেস্কের কৌতুক অভিনেতা মিল্কি মারদিনি সিরিয়ার অন্য নাগরিকদের মতো নিজেকে বর্তমানে স্বাধীন বোধ করছেন। তার ভাষ্যমতে, আসাদের শাসনামল সহসা শেষ হবে এমন চিন্তা করিনি। ভাবিনি এতো তাড়াতাড়ি স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবো।
স্বৈরাচার বাসার আল আসাদ সরকারের স্মৃতি রোমন্থন করে এই কৌতুক অভিনেতা আরও বলেন, সরকারের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ২০১১ সালের মার্চে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে আরব বসন্ত শুরু হয়। আরব বসন্তের ধারাবাহিকতাই সিরিয়ায় আসাদের পতন হয়েছে বলে মনে করেন এই কমেডিয়ান।
দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নারী কমেডিয়ান রামি জাবের বলেন, আজ আমরা বদ্ধ কক্ষের বাইরে উন্মক্ত অঙ্গনে কথা বলছি, শো করছি। কোনো গোয়েন্দা সংস্থাকে ভয় না পেয়ে প্রথমবারের মতো এমন শো করছি। এটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দাদয়ক বিষয়।

আসাদবিহীন নতুন যুগে নিজেদের চাহিদা মতো কৌতুক পরিবেশন করছেন সিরীয় কমেডিয়ানরা, ছবি: দ্য জাকার্তা পোস্ট
একটি বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানির বাণিজ্যিক প্রতিনিধি রামি জাবের আরও জানান, অনুপ্রবেশকারীর অভিযোগ এনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে আমাকে এক মাসের জন্য আটকে রাখা হয়েছিল। এ সময় মারধর করার পাশাপাশি টেজার দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল বলেও তিনি জানান।
হোসাইন আল রাওয়ি নামের একজন কমেডিয়ান জানান, আমি আসাদের ভয়ে তটস্ত থাকতাম। বিগত দিনে আমি নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানায় অবস্থান করতে পারিনি। আমাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে নানাভাবে হয়রানি করা হতো। এখন আমি স্বাধীনভাবে কৌতুক করতে পারছি।
মেরি ওবায়েদ নামের আরেকজন নারী জানান, এখন আমরা নিজেদের খুবই স্বাধীন মনে করছি। আশা করছি আমরা আর হেনস্থার টার্গেট হবো না। এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত কারণ আমরা এক যুগ থেকে আরেক যুগে প্রবেশ করেছি। আসাদবিহীন নতুন যুগে আমরা আমাদের চাহিদা মতো সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।
তথ্যসূত্র: আরব নিউজ ও দ্য জাকার্তা পোস্ট