Home সর্বশেষ ফ্লপ হলেও পছন্দের শীর্ষে তিন বলিউডি ‘রোম-কম’

ফ্লপ হলেও পছন্দের শীর্ষে তিন বলিউডি ‘রোম-কম’

ফারজানা জামান
১০৭ views
বলিউডের ফ্লপ কিন্তু দর্শকপ্রিয় তিনটি সিনেমা

বলিউডের সিনেমা মানেই প্রমোশনের ছড়াছড়ি। নায়ক ও নায়িকাসহ কলাকুশলীদের সামাজিক মাধ্যমের তোড়ে অর্ধেক প্রমোশন সেখানেই হয়ে যায়। কিন্তু একটা সময় ছিল, প্রচারণা তো দূরের কথা, অনেকে জানতোই না কোনো সিনেমা কত টাকা আয় করেছে প্রথম একমাসে। জুহি চাওলা নিজেও একবার সেই ঘটনা বলেন, মাসখানেক লেগে যেতো জানতে সিনেমাটি হিট না ফ্লপ! আবার অনেক সিনেমা হলে মুখ থুবড়ে পড়লেও পরে দেখা গেছে, সিনেমাটি আসলে দারুণ! হ্যালো বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য এবারের আয়োজন আন্ডাররেটেড বলে খ্যাত এমন তিনটি সিনেমা নিয়েই।

আন্দাজ আপনা আপনা

ভাবতেই অবাক লাগে এই সিনেমাটি ফ্লপ ছিল। নব্বইয়ের দশকের রোমান্টিক কমেডি এই সিনেমাটিতে কে ছিলেন না? ছিলেন সালমান খান, আমির খান, কারিশমা কাপুর, রাভিনা ট্যান্ডন, পরেশ রাওয়ালের মতো তারকারা। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া রাজকুমার সন্তোষী পরিচালিত ‘আন্দাজ আপনা আপনা’ সিনেমাটি ব্যবসাই করতে পারেননি। লোকমুখে বহুল চর্চিত যা ছিল তা হলো- সালমান ও আমিরের মাঝের কোন্দল। দুজনের পরিবারই বলিউডের, দুজনেই তখন দাপটের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে শোনা যায়- দ্বন্দ্বটা ছিল চরমে। তারা সেটে কথাও বলতেন না। ওদিকে একই ঘটনা ঘটে কারিশমা ও রাভিনার মাঝে। সমসাময়িক নায়িকা হওয়ায় তারা দুজন দুজনের প্রতিযোগী ছিলেন। শট হয়ে গেলেই দুজন দুদিকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতেন। ফলে সিনেমাটির প্রচারণায় কারও খুব বেশি আগ্রহ ছিল না।

কিন্তু বহু বছর পর দর্শকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে, ‘ক্রাইম মাস্টার গোগো’র বিখ্যাত সব সংলাপ। তার মাঝে অন্যতম- ‘আঁখে নিকালকে গোটিয়া খেলুঙ্গা’। আর ক্রাইম মাস্টার গোগোর চরিত্রে অভিনয় করা শক্তি কাপুর এক চরিত্র দিয়েই হয়ে গেলেন বলিউডের আইকনিক চরিত্রের অধিকারী। সিনেমাটির গল্প এমন- দুই তরুণকে নিয়ে যারা বিয়ে করার জন্য বড়লোক পাত্রীর খোঁজে একই শহরে পৌঁছে যায়। সেখানে গিয়ে গল্পের টুইস্টে পরেশ রাওয়ালের দ্বৈত চরিত্র নিয়ে টানা হেচড়ায় পড়েন দুজন। এর মাঝে রাভিনা না কারিশমা- কে বড়লোক আর ক্রাইম মাস্টার গোগোর মাস্টার স্ট্রোক তো আছেই।

লাভ কে লিয়ে কুছ ভি কারেগা

সাইফ আলী খানের ফিরে আসা ও টুইঙ্কেল খান্নার বিদায়ের ছবি এই ‘লাভ কে লিয়ে কুছ ভি করেগা’ সিনেমাটি। রোমান্টিক থ্রিলারের সাথে হাস্যরস, ২০০১ সালে এমন সিনেমা বানানোই হতো কম। আবার তাতে অভিনয় করেছেন ইতিমধ্যে ফ্লপ বলে খ্যাত তিনজন নায়ক। আফতাব শিবদাসানি, সাইফ আলী খান, ফারদিন খান। টুইঙ্কেল খান্নারও বক্স অফিসে অবস্থা তথৈবচ। সিনেমাটি মুক্তি পেতে পেতে অক্ষয় কুমারের সাথে প্রণয় শেষ বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন। সিনেমা জগৎকেও বিদায় জানিয়েছেন। সকলেই জানতো এটাই টিনা তথা টুইঙ্কেল খান্নার শেষ ছবি। সোনালি বেন্দ্রে সকলের পছন্দের হলেও হিট ফ্লপ মিলিয়েই চলছেন তখন। ফলে সিনেমার প্রচার-প্রচারণা বা গল্প নিয়ে চর্চা- কিছুই হয়নি। ফলে যা হবার তাই, দর্শক এই সিনেমার জন্য হলমুখী হননি। ঈশ্বর নিবাস পরিচালিত, রাম গোপাল ভার্মা এবং নীতিন মনমোহন প্রযোজিত সিনেমাটি ভিসিআর আমলে দর্শকপ্রিয়তা পায়। তখন দর্শক কমেডি ঘরানার সিনেমাটিকে নিয়ে আলোচনা শুরু করে। যদিও ক্রিটিকরা এখনও এর গল্পের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সামান্য প্রশ্ন রেখে যান টেবিলে।

সিনেমাটির গল্প দুই গরীব তরুণকে নিয়ে, যাদের কোনোভাবেই চাকরি হচ্ছে না। পাশাপাশি আরেক তরুণ, যে ভাগ্য বদলাতে বড়লোক কন্যাকে বিয়ে করলেও সম্মানের ছিটেফোটাও নেই শ্বশুরের কাছে। চাকরির খোঁজে থাকা দুই তরুণ আফতাব ও ফারদিন। আর বড়লোক কন্যা সোনালি বেন্দ্রের স্বামী হলেন সাইফ আলী খান। ভাড়া না দিতে পেরে রোজ বাড়িওয়ালার মুখঝামটা সহ্য করেন ফারদিনরা। বাড়িওয়ালার মেয়ে টুইঙ্কেল। তার সাথে ফারদিনের প্রেম। এক সময়ে বাড়িওয়ালা বলেন, হয় চাকরি নাও, ভাড়া দাও, না হলে মেয়ের বিয়ে অন্য জায়গায় হয়ে যাবে। টাকা-প্রেম আর ক্যারিয়ার নিয়ে বিপদগ্রস্ত ‍দুই তরুণ আর সম্মান পেতে ব্যাকুল আরেক তরুণের ‘হোয়াইট কলার ক্রাইম’ নিয়ে এই সিনেমাটি। এর শেষে ‘দুষ্টু’ লোকের পরাজয় না দেখানোতেই মূলত ক্রিটিকরা নড়েচড়ে বসেন। যদিও বর্তমানের অনেক সিনেমাতেই ভিলেনরা হিরো বনে যায়। এই সিনেমার ফ্লপের কারণ হিসেবে সেই সময়ের ‘অনৈতিক’ উপস্থাপনকেও দায়ী করেন অনেকে।

লাভ-সাব দে চিকেন খোরানা

২০১২ সালের এই সিনেমাটিও কমেডি ধাঁচের রোমান্টিক সিনেমা। ‘রাং দে বাসন্তী’র পর কুনাল কাপুরের ফিরে আসার ছবিটি মুক্তির পর ফ্লপ ঘোষণ করা হয়। মূলত গল্পটির গভীরতা কেউ বুঝতে পারেনি বলেই দাবি করেন সিনেমা-সংশ্লিষ্টরা।  রনি স্ক্রুওয়ালা, সিদ্ধার্থ রায় কাপুর এবং অনুরাগ কাশ্যপ প্রযোজিত এবং অভিষিক্ত সমীর শর্মা পরিচালিত সিনেমাটিতে এমন চমক আছে যা শেষ পর্যন্ত দর্শক ধরে রাখে।

গল্পটি শুরু হয় পাঞ্জাবের কোনো এক অচেনা গ্রামের পরিবারকে কেন্দ্র করে। এই পরিবারের ছেলেটি টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে যায় ভাগ্য খুঁজতে। ব্যর্থ হয়ে ফিরেও আসে। এসে দেখে অনেক কিছু বদলে গেছে। এদিকে গ্রামের আরেক মেয়ে হারমান তথা হুমা কোরেশিস সাথে তার প্রেম থাকলেও অমি তথা কুনালের পালিয়ে যাওয়াতে হুমার বিয়ের প্রস্তুতি চলছে তখন কুনালের চাচাতো ভাইয়ের সাথেই। একের পর এক ব্যর্থতার মাঝে হুমা কুনালদের পারিবারিক রেস্টুরেন্ট চালু করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এক সময়ের তাদের বিখ্যাত চিকেনের স্বাদই যেন ফিরে আসে না। সবাই বলে খাবার ভালো, কিন্তু আগের স্বাদ নেই।

অবশেষে দুর্ঘটনাবশত তারা পেয়ে যায় সেই উপাদানের খোঁজ। এই উপাদান মাদক হলেও রান্নায় আনে সেই পুরানো স্বাদ। জমে ওঠে ‘চিকেন খোরানা’র গল্প।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ