বলিউডের আকাশে কখনও আঁধার ভর করে না। কোনো না কোনো তারা জ্বলজ্বল করে সবসময়। আর সেই তারাকে দেখে অন্য কোনো আলোকপিণ্ড তারাতে পরিণত হতে চায়। এই তারা নভোমণ্ডলের আকাশের নয়। এই তারা বলিউডের রূপালি পর্দার। কিন্তু রূপালি পর্দার পেছনে কার জীবন সাজানো বাগান, আর কার জীবন কাটা বিছানো পথের, তা নিয়ে প্রশ্ন সবসময়ই রয়ে গেছে। বিশেষ করে যে অভিনেত্রীরা একা রয়ে গেছেন, তাদের ঘিরে আছে হরেক রকমের রহস্যভরা গল্প।
প্রথমেই আসে যে নাম তিনি রেখা। রেখা অমিতাভ বচ্চনের সাথে প্রেমের গল্প ছেড়ে আসার পর বিয়ে করে থিতু হতে চেয়েছিলেন। সেই সংসার টেকেনি। পরে আর সংসার করার চেষ্টাও করেননি রেখা।
একরকম একাই জীবন কাটানোর পথে আরেকজন – সিমি গাড়োয়াল। ক্রিকেটার মনসুর আলী খান পতৌদীর সাথে প্রেম ভেঙে যাবার পর নিজেকে ঘোছানোর চেষ্টা করলেও শেষপর্যন্ত একাই থেকে যান তিনি।
বর্তমানে শ্রতি হাসান, শমিতা শেঠি, আমিশা প্যাটেল বা তানিশা মুখার্জির কথা বারবার আসলেও অনেক আগে থেকেই এমন অনেক পর্দার প্রেমিকা আছেন, যাদের জীবনে প্রেম ধরা দেয়নি সুখের আঁচলে।
তেমনই একজন নাদিরা। পুরো নাম ফ্লোরেন্স ইজিকিয়েল নাদিরা। তিনি বাগদাদী ইহুদি পরিবারে জন্ম নেওয়া ভারতের একজন সফল অভিনেত্রী। ১৯৫২ সালে ‘আন’ চলচ্চিত্রের মধ্যদিয়ে নাদিরা সিনেমায় প্রবেশ করেন। রাজপুত-কন্যা চরিত্রে অভিনয় করেন দীলিপ কুমারের বিপরীতে। বেশিরভাগ সিনেমাতে তাকে নেতিবাচক চরিত্রেই দেখায় গেছে। কিন্তু সাফল্য পেয়েছেন ঠিকই। তবে ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন একা। এমনকি তার মৃত্যুর সময়ও ভৃত্য ছাড়া কেউ পাশে ছিল না। ঠিক কী কারণে তিনি একাকী জীবন কাটিয়েছেন তা কেউ জানতো না।
তবে পরিচালক নাসির হুসেনের জন্য একা জীবন কাটিয়েছেন আশা পারেখ— অনেকেই এ নিয়ে এখনও গল্প করেন। ‘দিল দেকে দেখো’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে নাসিরের সঙ্গে পরিচয় আশার। এই ছবি দিয়েই অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন তিনি। নাসির বিবাহিত ছিলেন। তাই নাসিরের জীবনে কোনো বাধা তৈরি করতে চাননি অভিনেত্রী। নীরবে প্রেম মনে পুষে গেছেন। একাও থেকে গেছেন। তবে অনেক বছর পরে এসে নিজে এটি স্বীকারও করেন যে, তিনি নাসিরের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন।
আশা জানান, নাসিরের মৃত্যুর আগে বেশ অনেকদিন দেখা হয়নি আশা-নাসিরের। কিন্তু কথাবার্তা ছিল তাদের মধ্যে। আশা পারেখ ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৩ সময়কালে হিন্দি চলচ্চিত্র অঙ্গনে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী ছিলেন। তার অভিনীত অসংখ্য সিনেমা চিরসবুজ হিসেবে পরিচিত। যার মাঝে ‘তিসরি মঞ্জিল’ অন্যতম। এই সিনেমার গান এখনও বেশ শ্রোতাপ্রিয়।
তালিকায় আরও আছেন পারভীন ববি। তিনিও কখনোই বিয়ে করেননি। তবে তার প্রেমিকের তালিকায় আছে পরিচালক মহেশ ভাট, অভিনেতা কবির বেদী ও ড্যানি ডেংজংপার নাম। এমনকি অমিতাভ বচ্চনের সাথেও তার প্রেমের সূচনা ঘটে বলে অনেকে বলাবলি করে। অবশ্য সেটির বদলে ববি একটা সময় অমিতাভের সাথে কাজ করাই বন্ধ করে দেন। আর দাবি করেন, অমিতাভ তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন, যার প্রমাণ কেউ পায়নি।
এত বছরের ক্যারিয়ারে সাফল্য হাতের মুঠোয় পেয়েও সংসার করেননি অভিনেত্রী টাবু। শোনা যায়, দক্ষিণ ভারতের সুপারস্টার নাগার্জুনের সাথে প্রেম এর অন্যতম কারণ। নাগার্জুন বিবাহিত হয়েও দীর্ঘ সময় ধরে টাবুর সাথে লিভ ইন সম্পর্কে ছিলেন বলে অনেকের ধারণা। তবে নিজের স্ত্রীকে ছাড়তে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হওয়ায় টাবু তার সাথে সম্পর্ক ছেদ করেন।
বিয়ে থা করেননি সুস্মিতা সেনও। ১৯৯৪ সালের মিস ইউনিভার্স সুস্মিতার জীবনে প্রেম নানা নামে, নানা রূপে এলেও স্থায়ী কোনো ভিত গড়তে পারেনি। ‘দস্তক’ সিনেমাতে কাজ করতে গিয়ে বিবাহিত বিক্রম ভাটের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অভিনেত্রী। এই প্রেম নিয়ে বলিপাড়াতে রীতিমত শোরগোল পড়ে যায়। তার কারণেই বিক্রমের সংসার ভাঙে বলে অভিযোগও আছে। সেই প্রেম চাপা পড়লে ‘কর্মা অ্যান্ড হোলি’ সিনেমার শুটিং করার সময় সুস্মিতার প্রেম শুরু হয় রণদীপ হুদার সঙ্গে। এর মাঝে হোটেল মালিক সঞ্জয় নারাং, বান্টি সচদেব, হটমেলের প্রতিষ্ঠাতা সাবির ভাটিয়া, মুদস্সর আজিজ, মানব মেননের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন সুস্মিতা। কিন্তু কোনোটিই সেই অর্থে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে পাকিস্তানি ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরামের সাথে তার সম্পর্কের গল্প। একটি রিয়েলিটি শোতে বিচারক হয়েছিলেন দুজন। তারপর প্রেম। ওয়াসিমের স্ত্রী তখন সদ্যপ্রয়াত। তাই খুব সহজেই দুজন দুজনের কাছাকাছি চলে আসেন। অনিল আম্বানিও তার প্রেমে ছিলেন বেশ কিছু বছর। তবে কোনো প্রেমই বিয়ের সম্পর্কে গড়ায়নি।