বক্স অফিসে ‘পুষ্পা-২’-এর পাহাড় সমান সাফল্য, তবু শান্তি নেই ‘পুষ্পা’ আল্লু অর্জুনের। নারী অনুরাগীর মৃত্যুর প্রতিবাদে এবার হায়দরাবাদে নায়কের বাড়িতে হামলা চালালেন একদল বিক্ষোভকারীা। আল্লু অর্জুনের জুবিলি হিলসের বাড়িতে এই হামলা চালিয়েছেন ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির একদল সদস্য।
২২ ডিসেম্বর বিকেল পৌনে ৫ টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি হঠাৎই জুবিলি হিলসের আল্লুর বাড়ির গণ্ডির মধ্যে ঢুকে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এদের মধ্যে একজন বাড়ির কম্পাউন্ডে উঠে টমেটো ছুড়তে শুরু করেন। নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের দেয়াল থেকে নামতে বললে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়।
এরপর বিক্ষোভকারীরা দেয়াল থেকে নেমে নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর শুরু করেন। সেখানে র্যাম্প বরাবর রাখা কিছু ফুলের টব নষ্ট করে দেওয়া হয়। ইট ছুড়তে থাকেন কিছু বিক্ষভকারী। বিক্ষোভকারীরা সবাই ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির (OU-JAC) সদস্য। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে ৬ জনকে আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হায়দরাবাদের ডিসিপি পশ্চিম অঞ্চল।
এর আগে বিধানসভায় দক্ষিণী সুপারস্টার আল্লু অর্জুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভান্থ রেড্ডি ও বিধায়ক আকবরউদ্দিন ওয়াইসি। ‘পুষ্পা টু’-এর প্রিমিয়িারে পদপিষ্ট হয়ে নারী ভক্তের নিহতের ঘটনায় সরাসরি অভিনেতাকে দায়ী করেছেন তারা।
অভিযোগে তারা বলেছেন, সন্ধ্যা থিয়েটারের প্রিমিয়ার উপলক্ষ্যে ভিড়ের মধ্যে এক নারী পদপিষ্ট হয়ে মারা যান। তার সন্তান গুরুতর আহত হন। এই ঘটনা শোনার পর আল্লু অর্জুন তার দিকে একবার চেয়ে মুচকি হেসে বলেছিলেন, ‘যে এবার সিনেমা সত্যিই হিট হবে।’
আল্লু অর্জুনের বাড়ির ফুলের টব নষ্ট করার পাশাপাশি ইট ছুড়তে থাকেন কিছু বিক্ষভকারী, ছবি: হিন্দুস্তান টাইমস
মুখ্যমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, কোনোরকম পুলিশি অনুমতি ছাড়াই আল্লু অর্জুন সেই রোড শো করেছেন। এমনকি এই ঘটনায় অভিনয়শিল্পীদের নায়কের পাশে দাঁড়ানোয় কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’র তথ্য বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর এমন অভিযোগের জবাবে ২১ ডিসেম্বর রাতে জুবিলি হিলসের বাড়িতে আল্লু অর্জুন সংবাদ সম্মেলনে জানান, নারী ভক্তের মৃত্যুর ঘটনায় এমন কোনো মন্তব্যই করেননি।
এ সময় আল্লু অর্জুন বলেন, ‘প্রেক্ষাগৃহ আমার কাছে মন্দিরের মতো। তাই এমন ঘটনা আমাকে কষ্ট দেয়। কিন্তু এই বিষয়ে প্রচুর ভুল তথ্য রয়েছে, বেশ কিছু বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচারিত হচ্ছে। আমি অত্যন্ত অপমান বোধ করছি। আর এটা তো স্পষ্ট চরিত্র হননের চেষ্টা। আমাকে মানুষ ২০ বছর ধরে চেনেন, আমি কি এরকম কথা বলতে পারি? আমি তো নিজের কাজেও যেতে পারছি না। বিগত ২০ বছরে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, আমি প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার কথা ভাবলে এতোটা অসচেতন হই না।’
কীভাবে এতো জড়ো হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে আল্লু বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে এর আগেই প্রেক্ষাগৃহের কর্তৃপক্ষের কথা হয়েছিল। কোনো রোড শো করিনি আমি। শুধু আমার গাড়ি থেকে বেরিয়ে অনুরাগীদের হাত নেড়ে বলতে চেয়েছিলাম, তারা যেন রাস্তা ছেড়ে দেয়। যেকোনও রাজনৈতিক নেতা এই কাজ করে থাকেন।’
দক্ষিণী সুপারস্টার আল্লু অর্জুন, ছবি: ওয়াল পেপারস ডটকম
আহত ছেলেটিকে কেন দেখতে যাননি সেই কারণও ব্যাখ্যা করে আল্লু জানান, আইনি জটিলতায় এতোটাই জর্জরিত ছিলাম যে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আমার জীবনের খুব দুর্দশার পরিস্থিতি এটি। নিজেরও একই বয়সের সন্তান রয়েছে, আমিও একজন পিতা। সন্তানের এই অবস্থায় বাবার মনে কি চলতে পারে, সেটা স্পষ্টই বুঝি। আহত ছেলেটির জন্য একটি ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
গত ৪ ডিসেম্বর হায়দরাবাদের সন্ধ্যা থিয়েটারে ‘পুষ্পা টু: দ্য রুল’ সিনেমার প্রিমিয়ারে পদদলিত হয়ে এক নারী ভক্তের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওই নারীর পরিবার থানায় মামলা করে। সেই মামলার তদন্তে নেমেই ১৩ ডিসেম্বর তেলেঙ্গানা পুলিশ গ্রেফতার করে সিনেমার হিরো আল্লু অর্জুনকে।
ওই দিনই মামলার শুনানি হওয়ায় আদালত অভিনেতার ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের রায় দেন। তবে এ রায়ের বিরোধিতা করেন আল্লু অর্জুনের আইনজীবী। নায়কের বিরুদ্ধে আনা এফআইআর খারিজের আবেদন করেন তিনি। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তেলেঙ্গানা হাইকোর্টের বিচারপতি জি শ্রীদেবীর বেঞ্চে ৫০ হাজার টাকার মুচলেকা দিয়ে অন্তর্বর্তী জামিন পান আল্লু অর্জুন। তাকে গ্রেফতার করায় নেট দুনিয়ায় হইচই পড়ে যায়।
