Home বাণিজ্য বাংলাদেশি পোশাকের শীর্ষ ক্রেতা সুইডেনের এইচঅ্যান্ডএম

বাংলাদেশি পোশাকের শীর্ষ ক্রেতা সুইডেনের এইচঅ্যান্ডএম

ইকবাল হোসেন
৭৫ views

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা সুইডেনের বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য মতে, গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বাংলাদেশ থেকে ২৫৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক কিনেছে কোম্পানিটি। বাংলাদেশের দুই শতাধিক কারখানা থেকে এই পোশাক কিনেছে তারা। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া প্রতিদিনের চালানে থাকছে এইচঅ্যান্ডএমের পোশাক। গড়ে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটির ২ হাজার ৪২টি চালান জাহাজ বা উড়োজাহাজে তোলা হচ্ছে। তাতে নবজাতক থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের পোশাক রয়েছে। 

গত অর্থবছরে বিশ্বের ৪৪টি দেশের সহস্রাধিক আউটলেটে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পোশাক তুলেছে এই কোম্পানি। যদিও অনলাইনে তাদের পোশাক কিনতে পারে ৬০টি দেশের মানুষ। বাংলাদেশে তৈরি এইচঅ্যান্ডএমের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে পোল্যান্ড, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে। 

১৯৪৭ সালে একটি স্টোর দিয়ে যাত্রা শুরু করা এইচঅ্যান্ডএমের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা এখন ৪ হাজার ২৯৮টি। গত বছর কোম্পানিটি ২১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। নাসডাক নর্ডিক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির প্রধান ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে এইচঅ্যান্ডএম, কজ, উইকডে, মানকি, চিফ মানডে, এফাউন্ড, অ্যান্ড আদার স্টোরিজ। 

এইচঅ্যান্ডএমের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের ৪১ দেশের ৯১৬ সরবরাহকারী থেকে পোশাক, হোম টেক্সটাইল, জুতা ও প্রসাধন পণ্য নেয় তারা। বাংলাদেশে থেকে তিন দশক ধরে তৈরি পোশাক নিচ্ছে তারা। এমনকি অনেক দিন ধরে কোম্পানিটি বাংলাদেশি পোশাকের শীর্ষস্থানীয় ক্রেতা। গত ২০২১-২২ অর্থবছর সবচেয়ে বেশি ২৯০ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে। এরপর কিছুটা কমলেও সেরার তালিকায় রয়েছে। ১৯৮৩ সাল থেকে বাংলাদেশে নিজস্ব প্রোডাকশন অফিসসহ উপস্থিতি আছে এইচএন্ডএম গ্রুপের। 

বাংলাদেশি  তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শীর্ষ ক্রেতার তালিকায় আছে যথাক্রমে স্পেনের ইন্ডিটেক্স ও আয়ারল্যান্ডের প্রাইমার্ক। বিদায়ী অর্থবছরে শীর্ষ তিন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৫৯০ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক কিনেছে। 

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে কয়েক হাজার ক্রেতার কাছে ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে শীর্ষ ১০ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৫০ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে। অর্থাৎ মোট রপ্তানির ২৯ শতাংশই নিয়েছে এই ১০ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। তারা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক নিয়ে মূলত বড় বাজারগুলোতে বিক্রি করছে। বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের শীর্ষ ১০ ক্রেতার তালিকায় এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্স ও প্রাইমার্কের পরে আছে ডেনমার্কের বেস্টসেলার, যুক্তরাজ্যের মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, নেদারল্যান্ডসের সিঅ্যান্ডএ, জাপানের ইউনিক্লো, পোল্যান্ডের এলপিপি, যুক্তরাজ্যের নেক্সট ও পোল্যান্ডের পেপকো। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ক্রেতা ওয়ালমার্ট গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ৪০ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে। প্রতিষ্ঠানটি বায়িং হাউসের মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ পোশাক কিনে থাকে, যা শনাক্ত করা যায়নি। 

বাংলাদেশের কারখানাগুলো মূলত সস্তায় তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শীর্ষ দশে জায়গা করে নেওয়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশ থেকে গড়পড়তা সস্তা পোশাক কিনছে। তারা প্রতি পিস পোশাক কিনেছে গড়ে তিন ডলারে। শীর্ষ ১০ ক্রেতার মধ্যে ইউনিক্লো সবচেয়ে বেশি—প্রতি পিস পোশাক ৫ দশমিক ৪১ ডলারে কিনেছে। 

ফ্রান্সের লুই ভিতোঁ, ডিওর ও শ্যানেল, ইতালির গুচি, যুক্তরাষ্ট্রের নাইকির মতো বিশ্বের অভিজাত ব্র্যান্ডগুলো গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পোশাক কিনেছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে জার্মানির স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড অ্যাডিডাস বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনছে। গত অর্থবছরে ২ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পোশাক কিনেছে অ্যাডিডাস। প্রতি পিস পোশাকের গড় মূল্য ছিল সাড়ে ২৩ ডলার বা ২ হাজার ৮৩৪ টাকা। আবার পরিমাণে কম হলেও যুক্তরাষ্ট্রের রালফ লরেন, কানাডার লুলুলেমনের মতো বিখ্যাত ক্রেতারাও বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনছে। বাংলাদেশ থেকে বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো অল্প কিছু পোশাক কিনছে, যেগুলো প্রতি পিসের রপ্তানি মূল্য ৩০০ থেকে ৫০০ ডলার।

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় শীর্ষ ক্রেতা ইন্ডিটেক্স। স্পেনের বহুজাতিক এই কোম্পানি প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা বাড়াচ্ছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২১৮ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে ইন্ডিটেক্স। এর আগে তারা বাংলাদেশ থেকে এক অর্থবছরে দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক কেনেনি। 

বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১৩টি দেশের বিক্রয়কেন্দ্রে পোশাক পাঠায় ইন্ডিটেক্স। তবে সবচেয়ে বেশি গেছে স্পেনে—১৮৭ কোটি ডলারের পোশাক। কোম্পানির প্রধান ব্র্যান্ড জারা, পুল অ্যান্ড বিয়ার, বারস্কা, স্ট্র্যাডিভারিয়াস, ওইশো, ম্যাসিমো দত্তি। বাংলাদেশ থেকে কেনা এই কোম্পানির পোশাকের তালিকায় অন্তর্বাস থেকে শুরু করে ওভারকোট—সবই আছে। আর পোশাক সরবরাহ করেছে বাংলাদেশের ২৫০টি কারখানা। 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ