বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্থলচর প্রাণী আফ্রিকান হাতি। এই স্তন্যপায়ী প্রাণী বুদ্ধিমান ও অত্যন্ত সামাজিক হিসেবে আলোচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, দিন দিন এই প্রাণীটির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
গবেষকেরা অর্ধ শতক ধরে আফ্রিকান হাতি ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার বিষয়টি নথিভুক্ত করেছেন। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে আফ্রিকা জুড়ে অসংখ্য স্থানে আফ্রিকান হাতির সংখ্যা কমছে আশঙ্কাজনক হারে।
বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিলের অনুমানে ১৯৩০-১৯৪০ দশকে ৩০-৫০ লাখ আফ্রিকান হাতি ছিল। ১৯৮০-১৯৯০ দশকের ভিতরে তাদের সংখ্যা ১৩ লাখ থেকে কম হয়ে ৬ লাখ হয়ে যায়। কেনিয়ায় ১৯৭৩ আর ১৯৮৯ মধ্যে হাতির সংখ্যা কমেছে অন্তত ৮৫ শতাংশ।
আফ্রিকার দেশ ‘চাদ’-এ হাতির সংখ্যা ৪ লাখ থেকে কমে ২০০৬ সালে মাত্র ১০ হাজারে পৌঁছেছিল। তানজানিয়ার সেলুস অভয়ারণ্যে হাতির সংখ্যা ১৯৭৬ সালে ছিল ১ লাখ ৯ হাজার। সেখান থেকে ২০১৩ সালে মাত্র ১৩ হাজারে এসে দাঁড়ায়।

অর্ধ শতাব্দী ধরে আফ্রিকায় হাতির সংখ্যা কমছে আশঙ্কাজনক হারে। ছবি: সাভো ট্রাস্ট
অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশে হাতির সংখ্যা কমেছে ১ লাখ ১১ হাজারের মতো। এর আগে ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩৭টি দেশের হাতির উপস্থিতি নিয়ে আরেকটি গবেষণা করা হয়। প্রায় ৪৭৫টি এলাকায় হাতির সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, আফ্রিকান হাতির দুটি প্রজাতি— সাভানা ও ফরেস্ট হাতির অবস্থার সবচেয়ে খারাপ। জরিপ করা বিভিন্ন স্থানে সাভানা হাতির সংখ্যা গড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। ফরেস্ট হাতি কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে, আফ্রিকায় আর মাত্র ৪ লাখের মতো হাতি রয়েছে।
গবেষকেরা বলছে, গত সিকি শতাব্দীর মধ্যে হাতির জন্য এখনই সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কিছু জায়গায় হাতি একেবারেই অদৃশ্য হয়ে গেছে। আফ্রিকান এলিফ্যান্ট স্ট্যাটাস রিপোর্টে এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এর পেছনে মূল কারণ হাতি শিকার। চোরাচালানের কারণে উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকা হাতির সংখ্যা দিনকে দিন কমছে। চোরা শিকারীরা হাতি নিধন করছে তাদের দাঁতের জন্য। এসব দাঁতের বেশ চাহিদা রয়েছে চীন ও এশিয়ার কিছু অংশে।
তবে হাতি কমে যাওয়ার পিছনে এটাই একমাত্র কারণ নয়। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হাতির বসতিও ধ্বংস হচ্ছে। আবাসস্থলে ক্ষতির কারণেও হাতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্য প্রাণী সংরক্ষণের অধ্যাপক জর্জ উইটেমায়ার বলেন, হারিয়ে যাওয়া হাতি আর ফিরে আসবে না। তারা ক্রমাগত চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। সামনের দিকে আরও হাতি কমবে।