Home বাংলাদেশ রেলের বন্ধ থাকা ৯৩ কমিউটার ট্রেন পুনরায় চালুর পরিকল্পনা

রেলের বন্ধ থাকা ৯৩ কমিউটার ট্রেন পুনরায় চালুর পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭৮ views

বাংলাদেশ রেলওয়ে স্থানীয় জনগণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বল্প-দূরত্বে ভ্রমণের সুবিধার্থে বন্ধ থাকা ৯৩টি কমিউটার ট্রেন পুনরায় চালুর পরিকল্পনা করছে। ক্রু, জনবল, ইঞ্জিন ও কোচ সংকটের কারণে এই ট্রেনগুলো বন্ধ করা হয়েছিল।

২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় সবচেয়ে বেশি ট্রেন বন্ধ হয়েছিল। এই ট্রেনগুলোর মধ্যে ৫০ বছরের পুরনো ট্রেনও রয়েছে। কর্তৃপক্ষ এখন এগুলোকে সংস্কার করে দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রী পরিষেবা হিসেবে চালুর কথা ভাবছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৭২ সালে চালু হওয়া ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস, যা পাঁচটি জেলার অন্তত ৩৪টি স্টেশনে থামতো। বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চলের কর্মজীবী মানুষেরা এই লোকাল ট্রেনে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের পাশাপাশি নিত্যপণ্যও পরিবহন করতেন।

চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের জালালাবাদ এক্সপ্রেস ছিল ৭টি জেলার হাজারো মানুষের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। এছাড়া, ময়মনসিংহ থেকে পাশের জেলা জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় সকাল-বিকাল চলাচল করতো দুটি ট্রেন। ট্রেন দুটির ওপর কর্মজীবী, বিভাগীয় শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ নিম্ন আয়ের মানুষ নির্ভরশীল ছিলেন। সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা রুটের চারটি ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, গত এক দশকে আন্তঃনগর ট্রেনের কোচ ও ইঞ্জিন আমদানি করা হয়েছে। ফলে চাইলেও দ্বিতীয় শ্রেণির ট্রেনে তা যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। আমরা চিন্তা করছি, দ্বিতীয় শ্রেণির ট্রেনগুলো কীভাবে চালু করা যায়। আন্তঃনগর ট্রেনের পুরাতন কোচগুলোকে কনভার্ট করে চালুর চিন্তা করছি। মিটারগেজের (পূর্বাঞ্চল) ইঞ্জিনের সংস্থান করতে না পারলেও ব্রডগেজের (পশ্চিমাঞ্চল) কিছু ট্রেন চালু করা যাবে।

গত সেপ্টেম্বরে রেলে দুই অঞ্চল (পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল) থেকে বন্ধ থাকা ট্রেনের তালিকা সংগ্রহ করেছে রেল ভবন। তালিকাটি ইতোমধ্যে রেলভবনে পাঠানো হয়েছে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, পূর্বাঞ্চলে ট্রেন চালানোর জন্য নিয়মিত ৮৩০টি কোচ এবং ৬৩টি ইঞ্জিন পায় পরিবহন বিভাগ। ইঞ্জিন সংকটের কারণে প্রতিদিন কিছু ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সকল ট্রেনের সময়সূচির বিবরণ সম্বলিত প্রকাশনা টাইমটেবিল বই অনুসারে, সারাদেশে বর্তমানে মোট ৩৮৩টি ট্রেন চলাচল করার কথা। এরমধ্যে পূর্বাঞ্চলে ২১২টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১৭১টি। বাস্তবে চলছে মাত্র ২৮৪টি ট্রেন। বন্ধ রয়েছে ৯৯টি ট্রেন। এরমধ্যে পূর্বাঞ্চলের ৫০টি ও পশ্চিমাঞ্চলের ৪৯টি ট্রেন রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের আন্তঃদেশীয় (বাংলাদেশ–ভারত রুট) ৬টি ট্রেন বাদে বন্ধ হওয়া সব ট্রেন লোকাল, মেইল ও কমিউটার; অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণির।

জনবল, কোচ এবং লোকোমোটিভের অভাব রেলওয়ের পরিবহন ও যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, সবকটি ট্রেন চালাতে প্রয়োজন ৩ হাজারের বেশি কোচ এবং প্রায় ৫০০ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। কিন্তু রেলে বর্তমানে মোট আড়াই হাজারেরও বেশি কোচ আছে এবং তিন শতাধিক ইঞ্জিন। তবে এসব ইঞ্জিন ও কোচের মধ্যে সব সচল নয়। ৫০ শতাংশের বেশি ইঞ্জিন ও কোচের আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছে। বর্তমানে সচল কোচের সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি এবং সচল ইঞ্জিন আছে মাত্র দুই শতাধিক।

এরমধ্যে পূর্বাঞ্চলে ১,১৩১টি কোচ ও ৭৬টি ইঞ্জিন সচল। আর পশ্চিমাঞ্চলে ৮৯০টি কোচ ও ১৫৩টি ইঞ্জিন রয়েছে। তবে পূর্বাঞ্চলের বন্ধ ট্রেনসহ সবকটি ট্রেন চালাতে নূন্যতম ১১৬টি ইঞ্জিন ও দেড় হাজার কোচ দরকার। অন্যদিকে, পশ্চিমাঞ্চলে বন্ধ ট্রেন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন ও কোচ থাকলেও সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্রু নেই।

চাহিদার ৩০ শতাংশ ক্রু বা চালক সংকট আছে জানিয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, রেলের জনবল সংকট দীর্ঘদিনের। গত কয়েক বছরে ক্রু নিয়োগের পর ভেবেছি, সংকট কেটে যাবে। কিন্তু অনেকে চাকরি নিয়ে প্রশিক্ষণের পর আবার অন্য চাকরিতে চলে গেছেন। এজন্য সংকট কাটেনি।

তিনি বলেন, তবে অবসরে যাওয়া ক্রুদের মধ্যে যারা ফিজিক্যালি ফিট, তাদের চুক্তি-ভিত্তিক নিয়োগে নিয়ে সংকট নিরসনের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় এটি নিয়ে কাজ করছে। এটি চূড়ান্ত হলে কিছুটা স্বস্তি হয়তো পাওয়া যাবে।

গত এক যুগে রেলওয়ের উন্নয়নে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এরমধ্যে রেললাইন, সেতু, ভবন নির্মাণ এবং ইঞ্জিন-কোচ ক্রয়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। গত এক দশকের রেলের বহরে যুক্ত হয়েছে প্রায় ৮০০ কোচ এবং মাত্র ৩০টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ