শরীর-মন ভালো রাখার জন্য বছরে একবার নয়, প্রতিদিনের যত্নই সবচেয়ে কার্যকর। কিন্তু আজকের ব্যস্ত জীবনে ফিট থাকার জন্য জিমে না ছুটেও কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলা যায়। গবেষণা বলছে, মাত্র তিনটি অভ্যাস নিয়মিত পালন করলেই সারা বছর আপনি থাকতে পারেন ঝরঝরে, সতেজ ও সুস্থ। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই তিনটি সহজ কিন্তু কার্যকর স্বাস্থ্যসূত্র-
দৈনিক দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করুন
আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ ভাগই গঠিত পানি দিয়ে। সঠিক পরিমাণ পানি পান করলে শরীরের টক্সিন দূর হয়, হজম ভালো হয় এবং ত্বক উজ্জ্বল থাকে। পানির অভাবে ডিহাইড্রেশন হয়, যা রক্তচাপ কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা, মনোযোগে ঘাটতি এমনকি কিডনি ফাংশনে প্রভাব ফেলতে পারে।

সারাদিন হাইড্রেটেড থাকতে পানির বোতল সঙ্গে রাখুন, ছবি: ফ্রিপিক
দ্যা আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, হালকা মাত্রার পানির ঘাটতিও মেজাজ ও ব্রেইন ফাংশনে প্রভাব ফেলে। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করুন। সারাদিন হাইড্রেটেড থাকতে পানির বোতল সঙ্গে রাখুন এবং প্রতি দুই ঘণ্টায় অন্তত ১ গ্লাস করে পানি পান করুন।
প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা টানা ঘুম
ঘুম আমাদের শরীরের রিপেয়ার মেকানিজমের মূল চাবিকাঠি। ঘুম না হলে শরীর ক্লান্ত হয়, মন অবসন্ন হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। ঘুমের সময় শরীর গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ করে, যা কোষ মেরামত করে ও পেশি গঠনে সহায়তা করে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমায়, স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমায়, স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, ছবি: ফ্রিপিক
চেষ্টা করবেন রাত ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার। কারণ শরীরের জন্য রাতের ঘুম বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এবং ভালো ঘুমের জন্য ঘুমের আগে স্ক্রিন টাইম কমান, হালকা বই পড়া বা মেডিটেশন করুন।
প্রতিদিন ১ ঘণ্টা হাঁটা বা ৪৫ মিনিট ব্যায়াম
নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। WHO অনুযায়ী, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিটের মৃদু থেকে মাঝারি ব্যায়াম হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ও ডিপ্রেশনের ঝুঁকি ৩০–৫০% কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে রোজ ১ ঘণ্টা হাঁটলেও একই ফলাফল পাওয়া যায়।

রোজ হাঁটলে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়, ছবি: ফ্রিপিক
হাঁটার সময় শরীরে এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন মানসিকভাবে ভালো অনুভব করায়। সকালে হাঁটতে না পারলে দুপুর বা সন্ধ্যায় হালকা জগিং বা ঘরোয়া ব্যায়াম করুন। এছাড়া চেষ্টা করুন লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
পানি পান, ঘুম, ও হাঁটা বা ব্যায়াম—এই তিনটি সহজ নিয়ম আপনার শরীরের ভেতরকার ভারসাম্য বজায় রাখে। নিয়মিত অভ্যাসে রূপান্তরিত করলে দীর্ঘমেয়াদে এটি হয়ে উঠবে আপনার সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য-বন্ধু।