যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় জেঁকে বসেছে শীত। ঠাণ্ডার তীব্রতা এতো বেশি তাতে প্রাণ যাচ্ছে নবজাতকদের। পর্যাপ্ত আশ্রয় ও হিটিং সেন্টারের অভাবে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ছয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
উত্তর গাজার পেশেন্টস ফ্রেন্ডস বেনেভোলেন্ট সোসাইটি (পিএফবিএস) হাসপাতালের চিকিৎসক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সালেহ ও ডা. সামের লুবাদ জানান, হাইপোথার্মিয়া বা ঠাণ্ডার সমস্যা নিয়ে গত কয়েক সপ্তায় এই হাসপাতালে ভর্তি হয় ৯ নবজাতক। এর মধ্যে তিন নবজাতক চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও মৃত্যু হয়েছে ছয় জনের। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়, বিদ্যুৎ ও কেন্দ্রীয় হিটিং সেন্টারের অভাবে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

পিএফবিএস হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত এক নবজাতককে চিকিৎসা চলছে , ছবি: বিবিসি
খান ইউনুসের দ্য নাসের হাসপাতালের শিশু রোগ বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ আল ফারাহ বলেন, হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুই বছর বয়সী এক কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির পরিবার জানায়, ঠাণ্ডার কারণে মারা গেছে সে। রাতে প্রচণ্ড শীত পড়ে দক্ষিণের শহর খান ইউনুসে।
পিএফবিএস হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাঈদ সালাহ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভুগছে শিশুরা। এরই মধ্যে হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তিন নবজাতক। এক থেকে দুইদিন বয়সী এই শিশুদের ওজন ছিল ১.৭ কেজি থেকে দুই কেজির মধ্যে।
সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ১৬ মাস ধরে চলা যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২১ লাখ মানুষ। ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার ৭০ শতাংশ ঘর-বাড়ি। সঙ্গে ভেঙ্গে গেছে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সব প্রতিষ্ঠান। উপত্যকার ৩৫ হাসপাতালের মধ্যে নানা ধরনের ঘাটতির মধ্যে কোনো রকমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১৮ হাসপাতাল।

গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতে পরিবারের সঙ্গে শিশুরা, ছবি: আল জাজিরা
যদিও উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। তবে হামাসের অভিযোগ চুক্তির পরও ইসরায়েলি সেনাদের বাধার কারণে পর্যান্ত তাঁবু, মোবাইল হোম (অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র) এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরবারহ গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না।
আবহাওয়া ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহ ধরে উপত্যকাটির রাতের তামপাত্রা নিয়মিত ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকছে। গত সোমবার রাতে তাপমাত্রা কমে যায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচারক ডা. মুনীর আল বোর্শ এক বিবৃতিতে জানান, শীত মৌসুম শুরু হওয়ার পর ঠাণ্ডার কারণে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৫ শিশুর। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলেও মানবিক সহায়তা বিশেষ করে মেডিকেল ও হিটিং সরঞ্জাম, তাঁবু ও মোবাইল হোম পর্যান্ত পরিমাণে উপত্যকায় পৌঁছায়নি। ইসরায়েলের অসযোগিতার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীর অধিকাংশ এখন বসবাস করেন অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে, ছবি: বিবিসি
এদিকে ইসরায়েলি সামরিক প্রতিষ্ঠান কোগাট জানিয়েছে, মানবিক সহায়তা গাজায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রতি সপ্তাহে ৪ হাজার ২০০ মানবিক সহায়তা নিয়ে ট্রাক যাচ্ছে গাজায়। এরই মধ্যে রয়েছে তাঁবু ও আশ্রয় কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর হামাসের আন্তঃসীমান্ত হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়ার পর সেনা অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের লড়াইয়ে উপত্যকায় কমপক্ষে নিহত হয়েছেন ৪৮, ৩৪৮ জন। আর আহত হয়েছেন অগণিত মানুষ।
সূত্র: বিবিসি ও রয়টার্স