বাংলাদেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট, এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন সন্জীদা খাতুন প্রয়াত হয়েছেন গতকাল মঙ্গলবার। সবশেষ তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ছিলেন। আগলে রেখেছিলেন এই প্রতিষ্ঠানকে। আজ বুধবার শেষবারের মতো তিনি এলেন চেনা ছায়ানটে, অচেনা রূপে!
লাশবাহী গাড়িতে চড়ে এদিন ১২টার দিকে ছায়ানটে প্রবেশ করেন সন্জীদা খাতুন। এ সময় ছায়ানট ভবনে উপস্থিত ছিলেন ছায়ানটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মীসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের শত শত মানুষ।
তার মরদেহ এই ভবনে নিয়ে আসার পর মুহূর্তেই তৈরী হয় শোকাবহ। ছায়ানট কর্মীরা গানে গানে তাকে শ্রদ্ধা জানান। ছায়ানটসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠন থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। আট থেকে আশি, সব বয়সী মানুষ এদিন সন্জীদা খাতুনকে শ্রদ্ধা নিবেদনে উপস্থিত হন ছায়ানট ভবনে।
ঘণ্টা খানেকের বেশী সময় ছায়ানট ভবনে শ্রদ্ধা নিবেদন প্রক্রিয়া চলে। সবশেষে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে তাকে ছায়ানট থেকে বিদায় জানানো হয়। এরপর তাকে বহনকারী গাড়িটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে বাংলা বিভাগে কিছুক্ষণ রেখে তাকে তাকে বেলা আড়াইটায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এদিন ৪টা পর্যন্ত সেখানে রাখা হবে।

ছায়ানটে সন্জীদা খাতুনের মরদেহ আনার পর শ্রদ্ধা জানায় হাজার হাজার মানুষ, ছবি: হ্যালো বাংলাদেশ
গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সন্জীদা খাতুন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া এবং কিডনির রোগে ভুগছিলেন। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অগ্রণী এই ব্যক্তিত্ব একাধারে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগীতজ্ঞ ও শিক্ষক ছিলেন। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন সন্জীদা।
তার জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স, ব্শ্বিভারতী, শান্তিনিকেতন থেকে এমএ এবং সেখান থেকেই রবীন্দ্রসংগীতের ভাবসম্পদ নিয়ে পিএইডি সম্পন্ন করেন ১৯৭৮ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন।
একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, নজরুল স্বর্ণপদক, রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার, রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য উপাধিসহ বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন সন্জীদা খাতুন।
ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত করে ২০২১ সালে। এছাড়াও তিনি ভারত থেকে দেশিকোত্তম অনারারী ডিলিটসহ অসংখ্য দেশি-বিদেশি পুরস্কার পেয়েছেন।